Bangladesh Travel Writers Association - BDTWA

Bangladesh Travel Writers Association - BDTWA Bnagladesh Travel Writers Association (BDTWA) is a travel writers organazations we are working trave

আগাম ঈদের শুভেচ্ছা। দৈনিক কালের কন্ঠে ছাপা হলো ঈদ উপলক্ষে কাছে ধারের ভ্রমণ আখ্যান। মূল লেখা এখানে: https://www.ekalerkan...
12/06/2024

আগাম ঈদের শুভেচ্ছা।
দৈনিক কালের কন্ঠে ছাপা হলো ঈদ উপলক্ষে কাছে ধারের ভ্রমণ আখ্যান।
মূল লেখা এখানে: https://www.ekalerkantho.com/home/magazine/2024-06-10 /2

𝙇𝙖𝙩𝙞𝙣 𝘼𝙢𝙚𝙧𝙞𝙘𝙖𝙣 𝘾𝙖𝙧𝙣𝙞𝙫𝙖𝙡 - Day - 1Bangladesh Travel Writers Association - BDTWA  organizing a wonderful Carnival,  1st ev...
01/03/2024

𝙇𝙖𝙩𝙞𝙣 𝘼𝙢𝙚𝙧𝙞𝙘𝙖𝙣 𝘾𝙖𝙧𝙣𝙞𝙫𝙖𝙡 - Day - 1
Bangladesh Travel Writers Association - BDTWA organizing a wonderful Carnival, 1st ever in Bangladesh. It's a really great program for every traveler, writer & cultural people. BDTWA will present more wonderful events like this in the future.
Supported by _
* Brazil-Bangladesh Chamber of Commerce & Industry (BBCCI).
* Honorary Consulate of Chile.
* Honorary Consulate of Peru.
* Honorary Consulate of Uruguay.
* Honorary Consulate of Colombia.
* Embassy of Venezuela In India.
* Embassy of Cuba In India.
* American International University- Bangladesh (AIUB).

Travel and Tourism fair at BICC,Agargaon. Bangladesh Travel writers Association has a stall there,stall no Milkway 49
01/02/2024

Travel and Tourism fair at BICC,Agargaon.
Bangladesh Travel writers Association has a stall there,stall no Milkway 49

ফেব্রুয়ারি ১-৩ তারিখ, বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টার  আগারগাও এ  অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, বাংলাদেশ ট্রাভেল এন্ড...
31/01/2024

ফেব্রুয়ারি ১-৩ তারিখ,
বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টার আগারগাও এ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, বাংলাদেশ ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম ফেয়ার। উক্ত ফেয়ারে বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স এসোসিয়েশন এর থাকছে ভ্রমন নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন বইয়ের সমাহার। স্টল নম্বর মিল্কওয়ে ৫০। সকলকে আমন্ত্রিত...

আজ ২৪ ডিসেম্বর বিশ্বখ্যাত পর্তুগীজ নাবিক-অভিযাত্রী ভাস্কো দা গামার মৃত্যুদিবস। ১৫২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর ম্যালেরিয়ায় আক্রান...
24/12/2023

আজ ২৪ ডিসেম্বর বিশ্বখ্যাত পর্তুগীজ নাবিক-অভিযাত্রী ভাস্কো দা গামার মৃত্যুদিবস। ১৫২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি ভারতের কালিকটে মৃত্যুবরণ করেন। ইচ্ছে আছে ভাস্কো দা গামাকে নিয়ে এক সময় বিস্তারিত লিখবো। এই ছো্ট্ট লেখায় শুধু কয়েকটা সন তারিখ নিয়ে বলবো যা জানা জরুরী। ১৪৯৮ সালের ২০ মে ভাস্কো দা গামা ভারতে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত কোন ইউরোপীয় বা বৃটিশ শাসন ভারতের মাটিতে আঁচড় কাটতে পারেনি। ভাস্কো দা গামা এই পথটি সুগম করেছিলেন। এই কাজটি আর যে কেউ করতে পারতো, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যিনি করেছেন সেই মানুষটির নাম ভাস্কো দা গামা। একজন নাবিক-অভিযাত্রী হিসেবে তার বুদ্ধি, নেতৃত্ব ও দু্ঃসাহসের তুলনা নেই কিন্তু একজন মানুষ বা শাসক হিসেবে তার কর্মকান্ড সারা বিশ্বে যেমন খুবই গর্বের আর সম্মানের তেমনি ভারতীয় উপমহাদেশের কাছে কলঙ্কের এবং দু্ঃস্বপ্নের। আমার মনে নেই পাঠ্য বইয়ে আমরা তার জীবনী কী ভাষ্যে পড়েছিলাম। হয়ত মহানায়ক হিসেবেই পড়েছি। কারণ পৃথিবী তাকে সেভাবেই স্মরণ করে।
শুধু ভারতে নয় (এখানে ভারত বলতে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সব একসাথে তখনকার দিনে) বিশ্ব জুড়ে তাকালে হাজার হাজার বছর ধরে এই একই চিত্র দেখতে পাই। কার চেয়ে কে সেরা, কার চেয়ে কে মন্দ এই হিসেবের কোন শেষ নেই। যুগে যুগে মানুষ মানুষকে হত্যা করেছে, পুড়িয়ে মেরেছে, মানুষেরই রক্তের মানুষের হাত লাল হয়েছে। লালসা বা সম্পদের লোভে, শক্তি বার প্রতিপত্তির লোভে, দম্ভের দাপটে বা আত্মরক্ষার জন্যে মানুষ যুদ্ধ করে গেছে। কেউ হেরে গেছে, কেউ জিতে গেছে। মানুষকে কত বিচিত্র ও অভিনবভাবে মেরে আনন্দ উল্লাস করা যেতে পারে তা কেবল মানুষই আবিস্কার করে গেছে সৃষ্টির আদিপর্ব থেকে। আজো করছে। এই তো! ভাস্কো দা গামা সেই বহমান রক্তগঙ্গার একজন উল্লেখযোগ্য নাবিক ছাড়া আর কিছুই নন। যিনি ইউরোপ থেকে ভারতে আসার সমুদ্রপথও আবিস্কার করেছিলেন একই সাথে। কিন্তু ভাস্কো দা গামা কি এই সংঘর্ষ এড়াতে পারতেন না?
তিনি বিনাযুদ্ধে যুক্তিসংগত ভাবেই ভারতের সাথে ব্যবসা করতে পারতেন, কিন্তু ভারতকে তিনি ব্যবসা করার জন্যে খাজনা দিতে রাজি ছিলেন না। এখানেই দ্বন্দের শুরু। পর্তুগীজরা তখন সমুদ্র অভিযাত্রায় সারা পৃথিবীর মধ্যে সেরা। একের পর এক কলোনী স্থাপন করে যাচ্ছে। নতুন নতুন দ্বীপ, দেশ, রাজ্য দখল করছে, সম্রাজ্য বিস্তার করে চলছে অনায়সে। ফ্রান্স একবার পর্তুগালের জাহাজের উপর আক্রমণ করেছিলো ১৪৯২ সালে। তখন ভাস্কো দা গামাকে পাঠানো হয়েছিলো শায়েস্তা করার জন্য। ফ্রান্সকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিলেন সেই বার। ফলে ভাস্কো দা গামা কে, তার সাহস কতটা আর কোন মাপের উত্তাল সমুদ্র তিনি ঠান্ডা মাথায় সামাল দেয়ার ক্ষমতা রাখেন সেটা মাথায় নিয়ে ১৪৯৭ সালকে বিবেচনা করতে হবে। ফলে এটা এমন মনোভাব থাকা খুবই স্বাভাবিক ব্যপার যে, সারা দুনিয়ায় কলোনী স্থাপন করবো, খাজনা আদায় করবো কিন্তু খাজনা দেবো না কাউকে। আমরাই সেরা।
ভাস্কো দা গামা ভারতে ৩ বার এসেছিলেন। প্রথমবার এসে কালিকটের রাজার দরবারে দেখা করলেন। রাজা জানিয়ে দিলেন, ব্যবসা করবেন ভালো কথা, কিন্তু সবার মতো খাজনা দিয়ে ব্যবসা করতে হবে। এই কথা শুনে ভাস্কো দা গামা বেজায় নাখোশ হয়ে চলে গেলেন। কিছু উপহার-টুপহারও নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তাতে রাজার মন গলেনি। ভাস্কো দা গামা চলে আসার সময় ৩ জন নায়েব আর ১৬ জন জেলেকে ধরে নিয়ে আসেন। স্রেফ তাদেরকে অত্যাচার করে গায়ের ঝাল মেটাবেন বলে। আমার জানা নেই, এই হতভাগ্য ১৯ জনের কী পরিণতি হয়েছিলো ইতিহাসে তা লেখা আছে কিনা। মৃত্যুই অনুমেয়। ভাস্কো দা গামা দ্বিতীয়বার এসেছিলেন ১৫০২ সালে। এবার প্রস্তুতি নিয়ে এসছিলেন। গোলা বারুদসহ। কালিকটের রাজাকে শায়েস্তা করতে। এই যাত্রায় তিনি যে পাশবিক কর্মকান্ড চালিয়ে ছিলেন তা ছিলো অবর্ননীয়। ৪০০ হজ্ব যাত্রীসহ জাহাজ পুড়িয়ে দেয়া, শহর থেকে মুসলমানদের সরিয়ে দেয়ার দাবি, উপকূলীয় মানুষদের ধরে ধরে নাক কান কেটে নেয়া, এবং রাজা সামুদিরিকে পরাজিত করে লুটপাট করে জাহাজ ভর্তি গোল মরিচ আর মশলা নিয়ে পর্তুগালে ফিরে এসেছিলেন সেই বার।
এরপর ২০ বছর নিরব ছিলেন। পর্তুগালের রাজা তৃতীয় জন ভাস্কো দা গামাকে ‘ভাইসরয়’ উপাধি দিয়ে তৃতীয় বারের মতো ১৫২৪ সালে ভারত পাঠায়। এটাই ছিলো তার শেষ যাত্রা। যে মাটি শোষণ করার জন্য তার জীবনভর স্বপ্ন ছিলো সেই মাটিই তাকে বরণ করে নিয়েছিলো ২৪ ডিসেম্বর। আজকের দিনে। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। যদিও ১৫৩৯ সালে তার দেহাবশেষ ভারত থেকে পর্তুগালে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে লিসবন শহরের বিখ্যাত জেরোনিম চার্চের ভেতরে তার দেহাবশেষ সংরক্ষিত আছে। যাবো যাবে করে যাওয়া হয়নি, একদিন দেখতে যাবো।
আগেই বলেছি সেই যুগে নতুন দেশ আবিস্কার, কলোনী স্থাপন, সম্পদ লুটপাট করা, এবং না করতে পারলে ব্যবসা নামক ফন্দি ফিকির করা সকল শাসকেরই মজ্জাগত ছিলো। আর এই ভয়ঙ্কর কাজের জন্যে রাজা-রানীরা দুঃসাহসী নাবিকদের পেছনে অনেক অনেক অর্থ-সম্পদ লগ্নিও করতেন। পর্তুগালের রাজা যেমন ভাস্কো দা গামার সমুদ্র অভিযানের রসদ জোগান দিয়েছেন, স্পেনের রানী তেমনি কলম্বাসকে জাহাজ, নাবিক, খাবার-দাবার, গোলা-বারুদ সব দিয়েছিলেন। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও এদেশে ব্যবসা করতেই এসেছিলো। ফলে ভাস্কো দা গামা যা করেছিলেন তার বিচার করতে গিয়ে দুটো দিক বিবেচনা করা হয় – ১. তিনি সমুদ্রপথ আবিস্কার করে পুরো ইউরোপের জন্য নতুন বাণিজ্য দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন যা পরবর্তীতে ফান্স-বৃটিশসহ অন্যান্য ইউরোপীয়রা অনুসরণ করেছিলেন। ২. তিনি ভারতে পর্তুগীজ কলোনী স্থাপন করতে গিয়ে যে অত্যাচার ও দুসাশন করেছিলেন। বিশ্ব ইতিহাস এই দুয়ের মধ্যে প্রথমটির জন্যেই তাকে বেশি স্মরণে রেখেছে।
ভাস্কো দা গামার মুসলিমদের উপর বিতৃষ্ণার দুটি কারণ স্পষ্ট দেখতে পাই। এক. ৭১১ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১২৯৪ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ ৫০০ বছর পর্তুগালে মুসলিম শাসন ছিলো। পর্তুগালের খ্রীস্টান এবং ইহুদি নাগরিকরা যা পছন্দ করতেন না। হতে পারে ভাস্কো দা গামা সেই পরাধীনতার অপমান দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। দুই. সমুদ্র পথে ভারত আসার এই পথ আবিস্কারের আগে ইউরোপীয়দেরকে ভারত ও চীন আসার সময় স্থল পথে মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করতে হতো এবং মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাসীন শাসকরা ইউরোপীয় বণিকদের কাছ থেকে কর আদায় করতেন। যেটা তাদের মোটেও ভালো লাগতো না। বোধ করি এই করের ঝামেলা এবং মধ্যপ্রাচ্যের শাসকদের দাদাগিরি থেকে মুক্তি পেতে এতটা ঝুঁকি নিয়ে ভাস্কো দা গামা যখন ভারত এসে কালিকটের রাজা সামুদিরির কাছে আবার সেই করের দাবির মুখোমুখি হন, তখন তিনি তেলে বেগুণে জ্বলে উঠেছিলেন। কিন্তু কর দেয়া আর মুসলামনের অবস্থানের মধ্যে ভাস্কো দা গামা মুসলমানদের অবস্থান মেনে নেয়াকে কোনভাবেই বরদাস্ত করতে পারেন নি। তিনি সমঝোতার এক পর্যায়ে রাজা সামুদিরিকে বলেন, ঠিক আছে কর দেবো কিন্তু তোমার শহর থেকে সব মুসলমানদেরকে তাড়াও। কিন্তু সামুদিরি তাতে রাজি হননি। ফলে যুদ্ধ ছিলো অনিবার্য।
যদিও ইতিহাস এবং ঐতিহাসিক ঘটনা এতটা সাদা-কালো নয়, যতটা সহজে এখানে লিখলাম, হয়ত আরো তথ্য সংগ্রহ করতে পারলে ঘটনার নতুন মোড় আবিস্কার করা যেতে পারে। তবে তার আগ পর্যন্ত ভাস্কো দা গামার এই সমুদ্র পথ আবিস্কার পুরো বিশ্ব বাণিজ্যের চেহারা পাল্টে দিয়েছিলো বলে পৃথিবী আজো তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে এ সত্যই মাথা পেতে মেনে নিতে হবে। ভাস্কো দা গামা এক দুঃসাহসী অভিযাত্রীর নাম।

[ ছবি: এই সেই স্থান যেখান থেকে ভাস্কো দা গামা ১৪৯৭ সালের ২০ মে পর্তুগাল থেকে ভারত যাত্রা শুরু করেছিলেন। বর্তমানে সেই স্মৃতি স্মরণে এখানে একটি সুউচ্চ মনুমেন্ট তৈরি করা হয়েছে। ]

নাটোরের কাঁচাগোল্লার খোঁজে===================সৈয়দ আখতারুজ্জামান===================[লেখাটি দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকায় প্রক...
30/11/2023

নাটোরের কাঁচাগোল্লার খোঁজে
===================
সৈয়দ আখতারুজ্জামান
===================
[লেখাটি দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭। এখানে কিঞ্চিত পরিবর্ধিতরূপে আছে]
***

গাড়ি ছুটছে। বরেন্দ্র জাদুঘর হয়ে গোদাগাড়ীর দিকে। গোদাগাড়ী হয়ে চলে যাব সোজা পুঠিয়া রাজবাড়ি। পুঠিয়া রাজবাড়ি থেকে নাটোর যাব। আর যেহেতু নাটোরই যাচ্ছি, সেহেতু অবধারিতভাবেই মনের গহীন কোণে নাটোরের বিখ্যাত কাঁচাগোল্লার মুখটা বেশ উঁকি-ঝুকি মারছে। বাঙালির রসনা বিলাস নিয়ে বেগম রোকেয়া শতবর্ষ আগে থেকেই ভবিষ্যতবানী করে গেছেন – গুরুবাণী তাই মাথা পেতে নিয়েছি, অভ্যেস পাল্টানোর কোন রকম সাধনা করছি না।
রাজশাহী থেকে নাটোর যাওয়ার পথে দেখতে দেখতে যাব বলেই গাড়ি ভাড়া করেছি ইচ্ছামতো ঘোরার জন্য। বাসে যাইনি। এবারের মিশন হলো নাটোরের আসল কাঁচাগোল্লা কোথায় পাওয়া যায় সেটা খুঁজে বের করা। মনে আছে, এর আগে কুমিল্লার রসমালাই, বগুড়া আর গৌড়নদীর দই খুঁজতে গিয়ে কী অবস্থা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের শক্তিগড়ের আসল ল্যাংচা খোঁজার অভিজ্ঞতাও প্রায় একই রকম। আসল নামের সঙ্গে আদি, নতুন, আসল, ঘর, বিতান, আলয় ইত্যাদি শব্দযোগে প্রায় অর্ধশত দোকানের উপস্থিতি থাকায় কোন দোকানে যে আসল খাবারটি পাওয়া যাবে, সেটা বোঝার কোনো উপায় থাকে না। সকলেই বলে আমরাই আসল। সেই হিসাবে সকলেই আসল। নকলের ভিড়ে আসল লুকালে কোনটা সঠিক আসল সেটা বের করা আসলেই কঠিন হয়ে যায়। ফলে সময় নিয়ে যেতে হয়, এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে হয়, নিজেকেও খাবারের স্বাদ সম্পর্কে অভিজ্ঞ হতে হয়।
ভাবছেন, ধানভানতে শিবের গীত! কাঁচাগোলার খবর কোথায়! হ্যাঁ, ভ্রমণের ফাঁকে রসগোল্লা এসে যাবে এক সময়। ততক্ষণে পুঠিয়ার রাজবাড়িটা দেখে নেই একবার। তারপর নাটোর যাওয়া হবে। তারপর রসগোল্লা আসবে।
পুঠিয়া রাজবাড়ি ঐতিহাসিক স্থাপত্যের এক অনবদ্য নিদর্শন। কারুকার্যময় এই বাড়ির দরবার ঘর বেশ বড়, আছে জলসা ঘর, নকশা কাটা গেট। পাশে আছে বড় দিঘি। পিতাম্বর বাঘ এই পুঠিয়া রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। পাশেই পাঁচআনি জমিদারবাড়ি। যেখানে আছে একটি গোবিন্দ মন্দির। মন্দিরটি দেখতে দারুণ। এই মন্দিরের সামনে আরেক বিশাল দিঘি। নাম ক্ষীরসাগর দিঘি। দিঘিতে মন্দিরের ছায়া পড়ে এক অভূতপূর্ব সৌন্দর্য তৈরি করেছে। পুঠিয়ার রাজবাড়ি মানে রানি ভবানীর প্রাসাদ দেখা। এই রানি ভবানীকে নিয়েও বহু রোমহর্ষক কাহিনি প্রচলিত আছে। তিনি তখনকার সময়ে সবচেয়ে প্রতাপশালী রানি ছিলেন।
বিকেল সাড়ে ৩টা এরই মধ্যে বেজে গেছে। গাড়ি ছুটল নাটোরের পথে। নাটোরের রাজবাড়িতে ঢুকে একরকম বিস্মিতই হলাম। কোথায় পুরাকীর্তি, কোথায় ঐতিহ্য আর প্রাচীন ইতিহাসের গা ছমছমে গন্ধ! এখানে যে শত শত লোক সুপার হিট হিন্দি গান বাজিয়ে চিকেন বিরিয়ানি খেতে খেতে পিকনিক করছে। সারা মাঠ আর রাস্তায় ছড়ানো বিরিয়ানির প্যাকেট আর পলিথিন! গেট দিয়ে ঢুকতেই ডান পাশে বড় দিঘি; সামনে সাইনবোর্ড লেখা—‘এই দিঘিতে নৌকা ভ্রমণ হয়’। কিন্তু কোথাও তো কোনো নৌকা দেখতে পেলাম না। ও হ্যাঁ, একটা আছে বৈকি! তবে ভাঙা, অব্যবহৃত, তলাফুটো, একটা শ্যাওলা মাখা নৌকা আধডোবা অবস্থায় ঘাটের অদূরে পড়ে থাকতে দেখলাম। এই হচ্ছে নাটোরের দিঘাপতিয়ার রাজবাড়ি। ৪০০ বছরের পুরনো। যত যাই হোক, আমার কাছে আঞ্চলিক প্রশাসনের মস্তিস্কের থেকে জায়গাটা বেশ চকচকে লাগছিলো।
রাজবাড়িতে ঢুকতে প্রথমেই তোরণ আর তার মাঝখানে কামান চোখে পড়বে। পাশে সেই দিঘি। ভেতরে আছে দরবার ঘর, জলসা ঘর, অন্দর মহল, শ্বেত পাথরের নারী ভাস্কর্য, প্রার্থনা ঘর আর রাজাদের ব্যবহৃত নানা দ্রব্য। সব কিছুই দেখার মতো। শুধু একটু পরিচ্ছন্ন আর পরিপাটি থাকলেই হতো! সবকিছুর শেষ পরিনতি পিকনিক স্পট না হলেই ভালো হয়। রাজবাড়ি ঘিরে প্রায় ৫০ বিঘার এক বিশাল জলাশয়। পরিকল্পনা করলে এই লেকটিরও দারুণ চেহারা দেওয়া সম্ভব। আমরা ৩০ মিনিটের মধ্যে এক চক্কর লাগালাম। এবার আসল কাজ। কাঁচাগোল্লার খোঁজে বের হলাম।
প্রায় সব বিখ্যাত খাবারের মতো কাঁচাগোল্লারও আসল-নকল, ভালো-মন্দ আছে। নাটোরের সুসজ্জিত মিষ্টির দোকানের প্রায় সব কয়টিতেই কাঁচাগোল্লা আর সন্দেশ পাওয়া যায়। তবে সবটা আসল বা সুস্বাদু নয়। আমরা গোটা দশেক দোকানে হানা দিলাম, কিন্তু কোথাও সেই অসাধারণ স্বাদের কাঁচাগোল্লা পেলাম না। এবার নানাজনের কাছে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করলাম। একসময় অতি বৃদ্ধ এক হিন্দু ভদ্রলোক আমাদের একটা দোকানের কথা বললেন। এবার আমরা তাঁর বর্ণনামতো খুঁজে খুঁজে সেই দোকানের সামনে হাজির হলাম এবং মন খারাপ হয়ে গেল। কী ভাঙাচোরা, জরাজীর্ণ, পুরনো এক দোকান। বসার জায়গা তো দূরের কথা, ঠিকমতো দাঁড়ানোর জায়গাও হবে না। কী অবস্থা! তবুও খেতে চাইলাম। ছোটখাটো-পেটমোটা খালি গায়ে ঘামে ভেজা এক লোক কলাপাতায় করে একটি কাঁচাগোল্লা খেতে দিল। কলাপাতায় পরিবেশন করা হয়, এটাই এই দোকানের নিয়ম। আমি অনিচ্ছা নিয়েই মুখে পুরলাম। মুখে দেওয়ামাত্র মনে হলো বৈদ্যুতিক শক খেলাম। কী দারুণ তার স্বাদ! আহা চোখ বুজে এলো। এই না হলে নাটোরের বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা! অন্যান্য দোকানের স্বাদের সঙ্গে এর কোনো তুলনা হয় না। নাম তার ঘোষের কাঁচাগোল্লা। এখানে সন্দেশও পাওয়া যায়। অসাধারণ। আমরা বিভিন্ন রকমের সন্দেশ আর কাঁচাগোল্লা কিনে নিলাম। লম্বা লাইন দোকানের বাইরে। বিস্ময়কর ব্যাপার দোকানটির কোনো সাইনবোর্ড নেই। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে যে দোকান চলছে এবং সারা দেশ যাকে চেনে তার আবার সাইনবোর্ড দিয়ে কী হবে! যাঁরা আসল কাঁচাগোল্লা খেতে চান, তাঁরা নাটোর বাসস্ট্যান্ড থেকে সামনে এগোলে মৌচাক নামক জায়গায় পেয়ে যাবেন দোকানটি।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আমরা এবার বগুড়া রওনা হওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দিলাম। অকাজের তাড়নায় দুপুর খাওয়া হয়নি। রাস্তার ধারে এক রেস্টুরেন্টে ঢুকে হালকা কিছু নাশতা করে নিলাম—পরোটা, সবজি। তারপর গাড়ি ছুটল বগুড়ার দিকে। দারুণ একটি দিন কাটালাম। সকালে সপুরা সিল্ক ফ্যাক্টরি আর বিকেলের এই কাঁচাগোল্লার দোকান আবিষ্কার আমাদের ভ্রমণকে সার্থক করল।

@ Syed Akhteruzzaman

[নিজের তোলা ছবির সংগ্রহটি দেশে রয়ে গেছে। আন্তরিকভাবে দুঃখিত। পরে কোন এক সময় নিজের তোলা ছবিগুলো পোস্টে যোগ করার চেষ্টা করবো। আপতত অন্তর্জাল থেকে সংগ্রহ করে ছবিটি পোস্ট করলাম, সেখানে ও লেখা 'সংগৃহীত'।]

নদীর নাম তাগুশ, লোকে তারে হাজার বছর ধরে তেজো নামে ডাকে। কিন্তু রকম সকমে সে মহাসমুদ্রের ভাব বজায় রাখার চেষ্টা করে। গ্রামে...
18/11/2023

নদীর নাম তাগুশ, লোকে তারে হাজার বছর ধরে তেজো নামে ডাকে। কিন্তু রকম সকমে সে মহাসমুদ্রের ভাব বজায় রাখার চেষ্টা করে। গ্রামের চেয়ারম্যানের দোনালা বন্দুক-বাহক দুবলা-পাতলা যে লোকটি ঢিলা প্যান্টের পতন ঠেকাতে পাইরেট-বকলস লাগিয়ে ধান ক্ষেতের আইল ধরে চেয়ারম্যানের পিছে পিছে হাঁটে কিন্তু পুরু গোঁফের তলায় সংসদ-সদস্য টাইপ হাসি ঝিলিক মারে সেই বডিগার্ডের মতো আর কি! গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল! নদী সাগরে মেশে, সাগর গিয়ে মহাসাগরে মেশে - এটাই জলের গতিধারা। কিন্তু এই ইঁচড়ে পাকা তাগুশ নদী সাগরের তোয়াক্বা না করে, ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেয়ে, সোজা গিয়ে মিশেছে আটলান্টিক মহাসাগরে। এই নদীর পাড়ে দাঁড়ালে জলের ছলাত ছলাত আওয়াজের বদলে সাগরের বালুকা বেলায় জলের আছড়ে পড়ার শো শো শব্দ পাওয়া যায়। এই নদীতে বড় বড় প্রমোদতরী আসা যাওয়া করে। দশ-বারো তলা, অনেক বড় বড় ক্রুজ শীপ। এই নদীর উপর বড় বড় ঠ্যাং ফেলে দাঁড়িয়ে আছে ইউরোপের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু - ‘ভাস্কো দা গামা’। কিছুটা দূরত্বে নতুন বউয়ের সিঁথিতে শুয়ে থাকা সোনার টিকলির মতো আরো একখানা অনিন্দ্য সুন্দর সেতু - 'ভিন্তে সিঙ্কো দো এব্রিল’ পুরো লিসবনের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। পাল্টে দিয়েছে তাগুশ নদীর রূপ। যে রূপে আগুন জ্বলে। তাগুশের ওপারে আরো কত জনপদ। আলমাদা, কাসিলাস, কাপারিকো, ট্রেফারিয়া, সেইশাল আরো কত কী! তাই তাগুশের এত অহং, এত বড়াই, চোখে তার অফুরন্ত যৌবনের শিখা।

[লেখা: Syed Akhteruzzaman
ছবি: তাগুশ নদী, পর্তুগাল। যার দুই তীরে হাজার বছর ধরে গড়ে উঠেছে লিসবন শহর।]

একজন পর্যটক ভ্রমণের আগে যত প্রস্তুতিই নেন না কেন পড়াশোনার চেয়ে ভালো প্রস্তুতি আর হয় না। পড়াশোনা বলতে মূলত গন্তব্য সম...
13/11/2023

একজন পর্যটক ভ্রমণের আগে যত প্রস্তুতিই নেন না কেন পড়াশোনার চেয়ে ভালো প্রস্তুতি আর হয় না। পড়াশোনা বলতে মূলত গন্তব্য সম্পর্কে গবেষণাকেই বোঝাচ্ছি। সেটা হতে পারে অনলাইনে, হতে পারে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে, হতে পারে ম্যাগাজিন-পত্রপত্রিকা বা বই পড়ে, নানাভাবে। কিন্তু গন্তব্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা এবং আগ্রহের বিষয়ে সচেতন থাকা একজন পর্যটকের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য বলে মনে করি। নইলে ভ্রমণের সার্থকতা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
ভ্রমণেরও ROI (Return on Investment) হয়। আপনি তিল তিল করে অর্থ সঞ্চয় করে, কর্মব্যস্ত জীবনের মাঝখান থেকে ক্ষনিকের অবসর বের করে, বর্ণনাতীত শারীরিক কষ্ট সয়ে, আরো কত কী না করে একটি ভ্রমণ সম্পন্ন করেন। এর রিটার্ন তো অবশ্যই থাকা দরকার ।

ভ্রমণের রিটার্ন বলতে আপনি কী চান? ভ্রমণের রিটার্ন কী হতে পারে? প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হতে পারেন। দু'চোখ জুড়িয়ে দেখতে পারেন যা এতদিন শুধু বইয়ে পড়ে এসেছেন কিংবা সিনেমায় দেখেছেন বা বন্ধুদের মুখে শুনেছেন, এবার স্বচক্ষে দেখে মনের সাধ মেটাতে পারেন। আপনি ছবি তুলতে পারেন, ভিডিও করতে পারেন, আপনার পরিচিত কমিউনিটিকে ঐ গন্তব্য সম্পর্কে আপনার অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন। আর কী চান আপনি? সারা বছরের দীর্ঘ ক্লান্তিকর অনুভূতিগুলোকে দূর করে একটি সুখের স্বাচ্ছন্দময় তৃপ্তি নিয়ে আপনি ফিরে যেতে পারেন আপনার পুরনো আবাসনে - কর্মস্থলে। এই সবই ভ্রমণের রিটার্ন। কিন্তু সেই গন্তব্য সম্পর্কে যদি আপনার কাছে সঠিক তথ্য এবং যথেষ্ট তথ্য না থাকে (যা আপনার আগ্রহের সাথে সংশ্লিষ্ট) তাহলে আপনার ভ্রমণ হতে পারে অসম্পূর্ণ। যদিও জানার কোন শেষ নেই কিন্তু বেসিক তথ্য না জানা থাকাটাও তো কোন কাজের কথা নয়।

বাংলাদেশের কত ভ্রমণপিপাসু মানুষ গুলশান বনানী গেছেন বা আজিমপুর গেছেন অথচ কত মানুষ জানেন না বনানী গোরস্থানে শুয়ে আছেন বিখ্যাত গায়ক আব্দুল আলীম অথবা আজিমপুর কবরস্থানে শুয়ে আছেন সৈয়দ মুজতবা আলী। অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নেতার মাজারে যে তিনজন নেতা শুয়ে আছেন তাদের নাম কি। এটা নির্ভর করে ব্যক্তিগত আগ্রহের উপর যে, কোন গন্তব্যের জন্য কোন ধরনের তথ্য আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

কিন্তু কিছু গন্তব্য আছে যা আপনার আগ্রহের তোয়াক্কা করে না। যেমন লালবাগ গেলে আপনাকে ইসা খাঁ সম্পর্কে জানতেই হবে। মুর্শিদাবাদ গেলে পলাশীর যুদ্ধের ইতিহাস, আগ্রা গেলে সম্রাট শাহজাহান, উজবেকিস্তান গেলে তৈমুর লঙ, মিশর গেলে মিশরীর সভ্যতার ইতিহাস, জার্মানি গেলে বিশ্বযুদ্ধ ইত্যাদি খুঁটিনাটি আপনাকে জানতেই হবে।

ইউরোপের দেশগুলো আকারে ছোট হলেও জ্ঞান বিজ্ঞান ইতিহাস ঐতিহ্যে এর গুরুত্ব এত বেশি যা বলে শেষ করা যায় না। এক গ্রীস সভ্যতা, রোম সভ্যতা কিংবা বিশ্বযুদ্ধ অথবা উপনিবেশিক ইতিহাস সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা না থাকলে এই সব দেশ ভ্রমণ করা এক রকম অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়। যেমন পর্তুগালের ইতিহাস না জানলে পর্তুগাল ভ্রমণ অসম্পূর্ণই রয়ে যাবে।
কেউ কেউ আছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যাদের মুগ্ধ করে তাই হতেই পারে ঐ গন্তব্যের অন্য কোন তথ্য ইতিহাস, বিশেষত্ব ইত্যাদি জানার প্রয়োজন মনে করেন না। প্রাসা দো কর্মাসিও চত্বরের আলোকসজ্জা দেখে তিনি মুগ্ধ হবেন, সেলফি তুলবেন, তার জানার প্রয়োজন নেই যে ১৯০৮ সালে এই প্রাঙ্গনে রাজা কার্লোসকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল বা চত্ত্বরের মাঝখানে ঘোড়ার উপর যিনি বসে আছে তিনি রাজা জোসেফ, বা নাজারে সৈকতে গিয়ে তার জানার প্রয়োজন নেই পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ঢেউ (৮৬ ফুট) এই সৈকতে রেকর্ড করা হয়েছে। কোইমব্রা গিয়ে তার জানার প্রয়োজন নেই কোইমব্রা বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি অথবা মার্কস দ্য পোম্বাল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।
কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য যে, এই তথ্যগুলো জানা থাকলে ঐ দর্শনীয় স্থানের ভাষা এমনভাবেই পাল্টে যেত যে একজন পর্যটকের জীবনে ওই গন্তব্যটি জন্ম লাভ করত অথবা আরো অর্থবহভাবে বলা যায় যে, ঐ গন্তব্যে পর্যটকটিই নবজন্ম লাভ করতেন।
বই পড়ুন, আপনাদের পর্যটন-জীবন নব জন্ম লাভ করুক।

লেখা: Syed Akhteruzzaman

সিন্ত্রার অলিগলি রাজপথে=====================আকাশে মেঘ করেছে। কিন্তু মাঝে মাঝেই সেই ঘন কালো মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্য উঁকি দ...
10/11/2023

সিন্ত্রার অলিগলি রাজপথে
=====================
আকাশে মেঘ করেছে। কিন্তু মাঝে মাঝেই সেই ঘন কালো মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্য উঁকি দিচ্ছে। আর আলোয় ঝলমল করে উঠছে চারদিকের সবুজ বনানী। আমরা পর্তুগালের এক পাহাড়ি এলাকায় আছি। চারদিকের দূর দিগন্ত পর্যন্ত নজরে আসছে। ফলে অনুমান করছি আমরা পাহাড়ের চূড়ার দিকেই আছি। এলাকার নাম সিনত্রা। মাঝে মাঝেই জোরে বাতাস বইছে। যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে। ইউরোপে এখন বৃষ্টির মৌসুম আসি-আসি করছে।

আজ সকালে আমরা লিসবনের ট্রেনস্টেশন থেকে ৯টা ৪৫ মিনিটের ট্রেন পাকড়াও করে এক ঘন্টার ট্রেন যাত্রা শেষে কিছুক্ষণ আগে সিন্ত্রা ট্রেনস্টেশনে এসে নেমেছি। এখানে নেমেই সিনত্রা পর্যটন কাউন্টার থেকে বাসের টিকিট কেটে নিয়েছি। এই একটি টিকিটে সিন্ত্রার অনেকগুলো স্পট ঘুরে দেখা যাবে। এটা হপ-অন হপ-অফ বাস সার্ভিস। ফলে যেখানে খুশি সেখানে নেমে যাওয়া যাবে। আবার যখন খুশি তখন ঐ রুটের বাসে ওঠা যাবে। টিকেট থাকবে ঐ একটাই। ১২ ইউরো দাম। বাসটি উল্লেখযোগ্য সাইটসিয়িং স্পটে চক্রাকারে দিনভর ঘুরে যাচ্ছে। আর যাত্রীরা পছন্দমত জায়গায় ওঠা নামা করছে।

আমরাও সেই একই পথ অনুসরণ করলাম এবং সবচেয়ে বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান পেনা প্যালেসের সামনে এসে নামলাম। দূর থেকেই লম্বা ভিড় নজরে এলো। আজকে উইকেন্ড না হওয়া সত্ত্বেও এত ভিড় কেন বুঝতে পারলাম না। আমরা ভিড়ের ভয়েই শনিবার এবং রবিবার এড়িয়ে শুক্রবার এলাম। তবু শেষ রক্ষা হলো না।

সিন্ত্রায় যত পর্যটক আসেন তাদের জন্য পেনা প্যালেস দর্শন বাধ্যতামূলক, মানে অতি অবশ্য দর্শনীয় স্থান। হয়তো সেই জন্যেই এত ভিড়। আমাদের উচিত ছিল আগে থেকে এর প্রবেশ টিকেট নিশ্চিত করে আসা। কিন্তু আমরা তা করিনি। এখন তার মাশুল দিতে হচ্ছে। আমরা তিন ঘন্টা পরে টিকেট পেলাম।

এখানে যত খুশি তত পর্যটক একসাথে ঢুকতে দেয়া হয় না। সময় অনুযায়ী স্লট ভাগ করা আছে। প্যালেসের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী পর্যটক ঢুকতে দেওয়া হয়। যাতে বেশি ভিড়ে প্রাচীন স্থাপত্যের কোন ক্ষতি না হয়। আমরা তড়িঘড়ি ৩ ঘন্টা পরের প্রবেশ টিকেট কিনে নিলাম। দেরি করলে ওটাও হারাবো। এখন আমাদের হাতে এই তিন ঘন্টা সময় বেকাত পরে আছে। কী করি! পর্যটকের কাজের অভাব হয় না। ঘুরে বেড়ানোই তার কাজ। এই তিন ঘন্টা আমরা পায়ে হেঁটে আশেপাশের জায়গা ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং হিস্ট্রি মিউজিয়াম এলাকায় চলে আসলাম। দেড় ঘন্টা দূরে যাবো, বাকি দেড় ঘন্টায় ফিরে আসবো। এখানে দেখা যাবে সিন্ত্রার জনবসতি, অলিগলি, সিন্ত্রা ডাউন টাউন ইত্যাদি। যা ভাবা সেই কাজ, আমরা হাঁটতে শুরু করলাম। রাস্তার ম্যাপ ধরে নয়, ঘড়ির কাঁটা ধরে।

সিন্ত্রার অলিগলি রাজপথে ঘোরাঘুরি করতে করতে মনে হচ্ছিল এই প্রাচীন নগরী কত না গল্প, কত না অজানা ইতিহাসের সাক্ষী! কিন্তু সেই সব ইতিহাস তো সবটা আমার জানা নেই। এত এত জায়গা ঘোরাঘুরি করার আগে সময় হয় না এর ইতিহাস সম্পর্কে গভীরভাবে জানার। যা জানি সে অতি সামান্যই। ফলে পথ চলতে চলতেই যেটুকু ইতিহাস জানা যায়, জাদুঘর দুর্গ চত্ত্বরের সাইনেজে সংরক্ষিত তথ্য থেকে যেটুকু জানি, সেটকুই ভরসা। আগ্রহ জাগলে আরো পড়াশোনা শুরু হয় এবং আরো জানার সুযোগ হয়। তখন ওই একই স্থান আবারও দেখতে যেতে ইচ্ছে করে। নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। সিনত্রার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

সত্যি কথা বলতে আসার আগে শুধুমাত্র পেনা এবং মুরিশ দুর্গ এর নাম শুনেছিলাম। মুরিশ দূর্গের নাম থেকেই বোঝা গিয়েছিলো এটা মরোক্কো থেকে আসা মুরিশদের ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত। ইতিহাস সামান্যই জানি, ৮শ শতক থেকে ১২শ শতক পর্যন্ত মুরিশরা শাসন করেছে পর্তুগালসহ পুরো আইবেরিয়ান পেনিনসুলা। এবং ১২ শতকের মাঝামাঝি হেনরী দ্য নেভিগেটর (১১৪৭) এই মুরিশ দুর্গ জয় করে নেন। আর কিছু জানি না। বাকিটা পড়াশোনা করে জানতে হবে।

কিন্তু সিন্ত্রার অলিগলি বড় সড়কে হাঁটতে হাঁটতে বোঝা যাচ্ছিল, এ নগরী পরম যত্নে গড়া। বিভিন্ন সময়ে শাসকরা অতি আদরে গড়ে তুলেছেন এক একটি দুর্গ। এতটাই নান্দনিক সৌন্দর্যে তৈরি করা হয়েছে যা বর্ণনাতীত। সিন্ত্রার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শুধু নয়, এর অধিবাসীদের জীবনযাত্রা, ছোট বাড়ি-ঘর, এমনকি বাড়ির সামনে ছোট জায়গাটুকুতে গড়ে তোলা খুদে ফুলের বাগানটুকু দেখলেও সিন্ত্রার মানুষের রুচিশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। পাহাড়ি এলাকা মানেই কি তাই? তাওয়াং, কোহিমা, খনমো, দার্জিলিং, কালিম্পং, শিলং, মাউফলং আরো কত পাহাড়ি জনপদেও কী তাই দেখিনি?

যুগে যুগে পর্তুগালের শাসকরা সিনত্রার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন। গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপনের জন্য যা যা প্রয়োজন সব রাস্তাঘাট স্থাপনা তৈরি করেছেন। আর সেকারনেই ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কো সিন্ত্রাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

সিন্ত্রার অনেক কিছু নিয়ে বহু কিছু বলার আছে। বলবো কখনো।

লেখা: Syed Akhteruzzaman

আপনি এখনো সিনত্রা যান নাই? হায় হায়, কন কি! পর্তুগালে আসার পর থেকেই সিন্ত্রার নাম শুনে এসেছি সবার মুখে মুখে। অসাধারণ প্...
09/11/2023

আপনি এখনো সিনত্রা যান নাই?
হায় হায়, কন কি!
পর্তুগালে আসার পর থেকেই সিন্ত্রার নাম শুনে এসেছি সবার মুখে মুখে। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, পাহাড়ি এলাকা, সবুজ বনানী, কাছেই অপূর্ব সৈকত, ইতিহাস ঐতিহ্যের পটভূমিতে অনেক কিছুই দেখার আছে এখানে। রাজধানী লিসবন শহর থেকে লোকাল ট্রেনে যেতে মাত্র এক ঘন্টা সময় লাগে। যাওয়া-আসায় ৫ ইউরো ভাড়া। গাড়ি থাকলে ২০ মিনিট লাগে। যাব যাব করেও এতদিন যাওয়া হয়ে ওঠে নাই। ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট খ্যাত সিন্ত্রায় সবচেয়ে বিখ্যাত পেনা প্যালেস (Pena's Palace)। পাহাড়ি পথ বেয়ে ট্রেকিং করে উঠতে হয় চূড়ায় এবং এক একটা স্প্ট এক একটা পাহাড়ের উপরে। সেজন্যে লম্বা সময় ধরে হাঁটার অভ্যাস থাকা দরকার। ভালো ফিটনেস থাকা দরকার। সাথে কিছু শুকনো খাবার আর মৌসুম অনুযায়ী পোষাকের প্রস্তুতিও থাকা চাই। সিনত্রা ভ্রমণের জন্য একদিন কোনভাবেই যথেষ্ট নয়। এতকিছু দেখার আছে যা ভালো করে দেখতে হলে আমি মনে করি দুই থেকে তিন দিন সময় বরাদ্দ রাখা উচিত। আমি প্রথমবারে শুধুমাত্র ইতিহাস জাদুঘর এলাকা, পুরনো সিন্ত্রার বসত-বাড়ি, সরু রাস্তা আর মুরিশ দুর্গের (Moorish Castle) কিছু অংশ দেখতে পেরেছি। খুব শীঘ্রই আবারো যাওয়ার ইচ্ছা আছে। তখন বাকি জায়গাগুলো, আলেহেন্দ্র সৈকত বিচ এবং ডাউন টাউন আরো ভালো করে ঘুরবো। অল্প অল্প করে লিখে জানাবো।
এত কিছু জানার আছে, এত কিছু বলার আছে, কিন্তু ফেসবুক পোস্টে বেশি কথা লিখতে ইচ্ছা করে না, লেখা কেউ পড়ে না।
লেখা ও ছবি:
Syed Akhteruzzaman

পর্তুগালের রুটির গ্রাম আলহাদাস====================সৈয়দ আখতারুজ্জামানসদস্য, কার্যনির্বাহী কমিটিBangladesh Travel Writers ...
07/11/2023

পর্তুগালের রুটির গ্রাম আলহাদাস
====================
সৈয়দ আখতারুজ্জামান
সদস্য, কার্যনির্বাহী কমিটি
Bangladesh Travel Writers Association - BDTWA
====================
আকাশ দেখে বোঝার উপায় নাই বেলা দশটা বাজে। বাইরে তখনও মেঘলা দিনের শোকার্ত হাওয়ার বিলাপ। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। এখানে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হয় না সাধারণত। এখানে ঝম ঝম করে পড়ে, কিছুক্ষণ পরেই আবার ঝকে ঝকে রোদ দেখা যায় আকাশে। কিন্তু আজকে অবস্থা বেগতিক। আটলান্টিক ফুঁসে উঠেসে। পর্তুগালের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

আমি চায়ের কাপ হাতে দোতলার টানা বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। এই প্রথম আলহাদাস গ্রামটি দিনের আলোয় দেখার সৌভাগ্য হলো। কোইমব্রা ডিস্ট্রিক্টের একটি ছো্ট্ট মফস্বল শহরের নাম ফিগেইরা দ্য ফশ। আর সেই শহর থেকে দশ কিলোমিটর দূরে এক প্রত্যন্ত গ্রাম এই আলহাদাস।

গতকাল গভীর রাতে যখন এখানে এসেছি তখন ভূতুরে নিকষ অন্ধকার ছাড়া আর কিছু চোখে পড়েনি। এই গ্রামে একসময় ঘরে ঘরে রুটি তৈরি হতো বলে একে রুটির গ্রাম বলা যেতে পারে। গ্রামের প্রধান সড়কে এই রুটির ঐতিহ্য চিরস্থায়ী করে ধরে রাখতে ভাস্কর্য্য বানানো হয়েছে। এখন অবশ্য সেই সব রুটির কারখানা আর নেই। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দোকানে হরেক রকম রুটি পাওয়া যায়। ঘরে ঘরে আর রুটি বানানোর দরকার হয় না।

দূর দিগন্তে আকাশের গায়ে বোয়া ভিয়াজেম পাহাড়ের আঁকাবাঁকা গাঢ় সবুজ রেখা। নিচের ঢালে ঘন পাইনের জঙ্গল আর সমতলে শুয়ে আছে ফসলের মাঠ, কমলা, সবজি আর লেবুর বাগান, এখানে ওখানে উঁচু নিচু পাহাড়ের গায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে একতলা দোতলা ছোট ছোট ঘর বাড়ি। কোথাও বাড়িগুলো গুচ্ছ আকারে গায়ে গায়ে মিশে আছে, কোথাও দাঁড়িয়ে আছে একাকিত্বের আভিজাত্য নিয়ে। বাড়িগুলোর সামনে লন, বাগান, সবজি ক্ষেত আর পেছনে গবাদি পশু আর মুরগীর খামার সমেত। কোথাও কোথাও জমি খালি পড়ে আছে, শুধু চারপাশে দেয়াল তোলা। বোঝা যাচ্ছে - ভূস্বামী এখনো বাড়ি করার সিন্ধান্ত নেন নি।

বারান্দার দরজা খুলে কফির কাপ নিয়ে সামসও আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। সামস আমাদের হোষ্ট। এটা তার বাড়ি। সামস জানালো, যাদের জমিতে ইতিমধ্যে বাড়ি করা আছে তারা চাইলে সেই বাড়ির উপর আরো তলা বাড়াতে পারবে বা আশে পাশে আরো রুম বাড়াতে পারবে কিন্তু যাদের জমি এখনো খালি তারা বিনা অনুমতিতে বাড়ি তুলতে পারবে না। মিউনিসিপ্যালিটি থেকে আগে বাড়ির নকশার অনুমতি নিতে হবে। আমি ভাবলাম, যে পর্তুগীজ জাতি বৃটিশদের আগে বিশ্বে কলোনি স্থাপন শুরু করেছে তাদের নিয়মকানুন আগাগোড়া সুশৃংখল আর গোছানো থাকাই স্বাভাবিক।

সামস আমাকে নিয়ে নিচে নামলো। নিজের হাতে লাগানো লাল শাক, আলু আর রসুনের গাছ দেখাতে বাগানে নিয়ে গেলো। সেই সাথে দেখলাম লেবু গাছ, কমলা গাছ আর বাড়ির পেছনে রাখা গোয়াল ঘর। শূন্য গোয়াল। কে জানে আগের গৃহস্তের দুষ্ট গরু ছিলো কিনা! সামস জানালো, এই বাড়িটার মূল মালিক মারা যাওয়ার পর ওরা বাড়িসমেত এই জমিটা কিনেছে।

এখানে গ্রামের অধিকাংশ অধিবাসীই বৃদ্ধ। তরুণরা এখানে খুব একটা থাকে না। থাকবেই বা কেন? মোটা অংকের টাকা রোজগার করার জন্য পর্তুগাল যে ইউরোপের মধ্যে অন্যতম পিছিয়ে থাকা একটি দেশ সে কথা এখন কে না জানে! প্রত্যন্ত গ্রামে পড়ে থাকা বাপদাদার ভিটে বাড়ি পাহারা দেয় বৃদ্ধ দম্পতিরা। যাদের সন্তানরা সুখের সোনালি হরিণ ধরতে চলে গেছে ইউরোপের প্রথম বিশ্বের দেশগুলোয়। তার মানে প্রথম বিশ্বের মধ্যেও আরেকটা প্রথম বিশ্ব আছে, আরেকটা তৃতীয় বিশ্ব আছে। বুড়োরা বুডো হতে হতে যখন মরে যায় তখন এই বাড়িগুলো অল্প দামে বিক্রি হয়। সন্তানরা এখানে পাখির মতো। ১৮ বছর হয়ে গেলে উড়াল দিতে হয়। যার-যার তার-তার জীবন। কেউ কারো জন্যে মুখিয়ে থাকে না, মুখাপেক্ষিও হয়ে থাকে না। বুড়োদের চোখের জল নাকের জল এক করে এই অনুযোগ করার দরকার হয় না যে, ‘আমার ছেলে-মেয়েরা আমার ভরণ-পোষণ দিচ্ছে না, কিংবা আমাদেরকে বৃদ্ধা আশ্রমে ফেলে রেখে গেছে।‘ সকল জনগনের খাদ্য, বাসস্থান, চিকিতসা, শিক্ষা, এসবের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রের। এখানে নানারকম এজেন্সি আছে এইসব বাড়ি কেনাবেচা করার। অনলাইনে এইসব বাড়ির ছবি তুলে দাম উল্লেখ করে পোস্ট দেয়া হয়। বিভিন্ন শহরে এইসব এজেন্সীর চমকালো অফিস চোখে পড়ে।

আমরা বাড়ির সামনে একটা অসাধরণ রোজ মেরি ফুল গাছ ডালপালা মেলে বেড়ে উঠতে দেখলাম। লনের সবুজ ঘাস বৃষ্টিতে ভিজে কী যে সতেজ লাগছে! আর চারপাশে আরো আরো ফুল গাছ। একটা জবা ফুল গাছে লাল জবা ধরেছে। বাড়ির পাশেই সামস একটা কুয়ো দেখালো। মটরের সাহায্যে এই কুয়োর জল তোলা হয়, আর তা দিয়েই পুরো জমিতে সেচ দেয়া হয়। সে আমার সাথে দিয়ে দেবে বলে গাছ থেকে কিছু লেবু পেড়ে নিলো। আলহাদাস গ্রামের বাড়িগুলো এমনি অনেকটা খামার বাড়ির মতো। কারো ফসলি জমি বা বাহারি ফলের বাগান, কারো গৃহপালিত পশুর পালনে আগ্রহ। আর সারাদিন এর পেছনে ঠুকুর ঠুকুর করে নিরলস কাজ করে যাওয়া। দিনের আলো ডুবে গেলেই শান্ত-নিরিবিলএই আলহাদাস গ্রাম আরো নির্জন হয়ে পড়ে। গ্রামটির মায়ার পড়ে গেলাম যেন। তারউপর রুটি আমার ভীষণ প্রিয় খাদ্য। এমন দুয়ে দুয়ে চার আর কি মিলবে! ভাবছি এই গ্রামে একটা ছোট্ট খামার বাড়ি কিনে থিতু হবো কিনা। হা হা হা। পর্যটকের শিকড় গজালে চলবে! তার পায়ের তলায় থাকতে হবে সর্ষে।
বেলা বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের কোইমব্রা যেতে হবে। মিরাজ, তাউসিফ, সেতু সবাই রেডি। পর্তুগালের প্রথম এবং বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন দশটা বিশ্ববিদ্যালের একটি কোইমব্রা বিশ্ববিদ্যালয় এই কোইমব্রা শহরেই। সে গল্প আরেক দিন করবো। (চলবে)
লেখা ও ছবি (ভাস্কর্যের ছবি বাদে): Syed Akhteruzzaman

ভ্রমণকণিকা  # ২যে দুইটি জাতি আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের সাথে বার বার উঠে এসেছে তার একটি হচ্ছে ইংরেজ আরেকটি পর্তুগ...
05/11/2023

ভ্রমণকণিকা # ২
যে দুইটি জাতি আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের সাথে বার বার উঠে এসেছে তার একটি হচ্ছে ইংরেজ আরেকটি পর্তুগীজ। আর পর্তুগীজ বলতে আমরা জানি দুজন মানুষের নাম – ভাস্কো-দা-গামা আর ক্রিষ্টিয়ানো রোনাল্ডো দোস সান্তোস আভেইরো। কিন্তু পর্তুগালের ইতিহাসতো একটুই নয়। আরো কত কত নাম আরো কত কত ঘটনা এর জনপদের গল্পের সাথে মিশে আছে। একে একে অনেকে কথাই বলবো। কিন্তু আপনারা যারা আমাদের ট্রাভেল রাইটার্স এসোসিয়েশনের এই গ্রুপে আছেন তারা তো উতসাহ দেন না। প্রবাস জীবনের হাজারও ব্যাস্ততার মধ্যে সময় বের করে লিখতে তো কষ্ট হয়, এখন মনে হচ্ছে আপনাদের পড়তেও কষ্ট হয়। এতই কি খারাপ মানের লিখি? হলে তাও বলে দেবেন, সেই জন্যেই পড়তে দিচ্ছি। ফিডব্যাক না দিলের লেখার আগ্রহ থাকে না। আর ফিডব্যাক পেলে, ভালো মন্দ যাই হোক বলুন, আরো মন দিয়ে লেখার চেষ্টা করবো।
ছবির এই জায়গাটির নাম মার্কস দ্য পোম্বাল (Marquis Do Pombal)। পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের একটি প্রখ্যাত জায়গার নাম। আর মার্কস দ্য পোম্বাল একজন মানুষেরও নাম। যার অর্থ হলো পোম্বালের মার্কস। মার্কস হচ্ছে রাজার প্রশাসণ ও প্রতিরক্ষা বহরে ডিউক আর আর্লের মধ্যবর্তী একটি পদবী। যদিও ঐ ব্যাক্তিটির আসল নাম সেবাস্তিয়াও জোসে দ্য কারভালহো ই মেলো (Sebastião José de Carvalho e Melo)। কিন্তু আসল নামে দুনিয়ার কেউ তাকে চেনে না। রাজার দেয়া উপাধি/পদবি সেই মার্কস দ্য পোম্বালই ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে গেছে। যেমন মহাত্মা গান্ধী রয়ে গেছে, মোহনদাস করমচাঁদ মুছে গেছে, যদিও মহাত্মা তার নাম নয়। যাই হোক, নামে কিবা যায় আসে কাজেই তার পরিচয়। কিন্তু এইখানে জায়গার নামটাও এই ব্যক্তির নামে হওয়ায় নামটাকে আর বাদ দিয়ে এগুনোর উপায় নেই।
মার্কস দ্য পোম্বাল গর্তুগালের একজন আধুনিকমনস্ক স্বপ্নদ্রষ্টার নাম। যাকে আধুনিক পর্তুগালের অন্যতম কারিগর বলা হয়। রাজা জোসেফ প্রথম এর আমলে যিনি চিফ অফ মিনিস্টার বা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ১৭৫০ থেকে ১৭৭৭ পর্যন্ত। তার জীবন কাহিনী জানার খুব ইচ্ছে। কিন্তু পর্তুগীজ ভাষা এখনো পড়তে পারিনা বলে উদ্ধার করতে পারছি না। ইংরেজীতে কিছুই নেই। জানিনা ইংরেজী ভাষার সাথে পর্তুগীজদের শত্রুতা আছে কিনা। সাধারণ পর্তুগীজরা না ইংরেজী ঠিক মতো বলতে পারে, না বুঝতে পারে। অথচ বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের এলায়েন্স বা বন্ধুত্বপূর্ণ সমঝোতা চুক্তি যা তার কখনো ভঙ্গ করেন নি, সেটা পর্তুগাল আর বৃটেনের মধ্যে। যাই হোক, সে অন্য প্রসঙ্গ। কিন্তু এই মানুষটা সম্পর্কে যতই জানছি ততই কামাল আতাতুর্ক, মাহাথির মোহাম্মদ, লী কুয়ান উইয়ের মত ব্যাক্তিত্বের সাথে মিল পাচ্ছি। জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসার, নতুন পথ দেখানোর, মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে ঠেলে ঢুকিয়েছেন। কিন্তু মার্কস দ্য পোম্বাল শুরু থেকেই এমন ছিলেন না। রাজার বিরাগভাজন ছিলেন। চার্চের শাসন তার পছন্দ ছিলো না। চাইতেন সাধারণ মানুষের শিক্ষার আলো পৌঁছাক। কিন্তু দুনিয়ার তথাকথিত সকল রাজাই হিরক রাজার প্রতিরূপ। তারা কখনো চাইতেন না, সাধরণ জনগনের বুদ্ধি হোক, তারা তাদের অধিকার বুঝুক। জেনে অবাক হয়েছি, পর্তুগালের শিক্ষার হার ১৯৫০ সালে ছিলো মাত্র ৪০.৪%। মেয়েদের শিক্ষার হার ছিলো আরো কম। মার্কস দ্য পোম্বাল প্রশাসনের দায়িত্ব পাওয়ার পর, সেই ১৭৫০ সাল থেকে, ধীরে ধীরে সমাজ রিফর্মেশনের কাজ শুরু করেন কিন্তু যে কারণে পর্তুগাল থাকে সারা জীবন মনে রাখবে সেটা হচ্ছে ১৭৫৫ সালের প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের পর এই শহরের ধ্বংসস্তুপ সরিয়ে তিনি যেভাবে নতুন লিসবন শহর গড়ে ওঠে তুলেছেন। স্বজন সর্বস্ব হারানো ভগ্নহৃদয় পর্তুগীজদের আবার ঘুরে দাঁড়ানো স্বপ্ন দেখিয়েছেন। এই পুন:নির্মানের সফল হয়েছিলো মার্কস দ্য পোম্বাল এর নেতৃত্বে। আমি তাঁর আসল নাম মনে রাখতে চাই – সেবাস্তিয়াও মেলো।

[লেখা ও ছবি: Syed Akhteruzzaman]

Address

Uttara Sector 11
Dhaka
1230

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Bangladesh Travel Writers Association - BDTWA posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Bangladesh Travel Writers Association - BDTWA:

Videos

Share