21/10/2024
স্রষ্টা যাকে অপছন্দ করেন তাকেও অঢেল ধন-সম্পদ দান করেন। আর যাকে পছন্দ করেন তাকে দান করেন 'হিকমাহ'।
আরবী 'হিকমাহ' শব্দের অর্থ প্রজ্ঞা। সৃষ্টিকর্তা যাকে 'হিকমাহ' দান করেন সে সর্ব অবস্থায় সন্তুষ্ট থাকে, শান্তিতে থাকে।
যাকে 'হিকমাহ' দান করা হয় তার ভিতরে থাকে 'সাকিনা'। আরবী 'সাকিনা' শব্দের অর্থ শান্তি, প্রশান্তি, ধৈর্য, স্থৈর্য।
টেবিল ভর্তি খাবার অথচ প্রত্যেকটি খাবারে আপনি কোনো না কোনো দোষ খুঁজে পাচ্ছেন, পেট ভরে খেতে পারছেন না। কেননা আপনাকে সম্পদ দান করা হলেও 'হিকমাহ' দেওয়া হয়নি। যে কারণে আপনার ভিতর 'সাকিনা' নেই।
যাকে 'হিকমাহ' দেওয়া হয়েছে সে ভর্তা আর ডাল দিয়েও পরম প্রশান্তি নিয়ে পেট ভরে খেয়ে উঠবে।
উচ্চশিক্ষিতা সুন্দরী স্ত্রী বা প্রতিষ্ঠিত সুদর্শন স্বামী পেয়েও আপনি তাকে নিয়ে সুখী নন, কারণ আপনাকে 'হিকমাহ' দেওয়া হয়নি।
প্রিমিও গাড়িতে চড়েও আপনি খুশি নন, আপনার কেন মার্সিডিজ নেই? এর কারণ আপনার মাঝে 'হিকমাহ' নেই, 'সাকিনা' উঠে গেছে। আপনি আপনার অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট নন।
রিজিক শব্দের অর্থ অনেক ব্যাপক।
১. রিজিকের সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে অর্থ ও সম্পদ।
২. রিজিকের সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা।
৩. রিজিকের সর্বোত্তম স্তর হচ্ছে পুণ্যবান স্ত্রী/স্বামী এবং পরিশুদ্ধ সন্তান।
৪. রিজিকের পরিপূর্ণ স্তর হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি।
আপনি পুরো জীবনে কত টাকা আয় করবেন সেটা লিখিত, কে আপনার জীবনসঙ্গী হবে সেটা লিখিত, কবে কোথায় মারা যাবেন সেটাও লিখিত এবং কতটা খাবার ও পানীয় গ্রহণ করবেন তাও লিখিত বা নির্দিষ্ট।
আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, আপনি কতগুলো দানা বা ভাত দুনিয়াতে খেয়ে তারপর মারা যাব সেটাও লিখিত। একটি দানা কমও না, বেশীও না।
ধরুন, আপনি সারাজীবনে এক কোটি টাকা আয় করবেন, এই সিদ্ধান্ত সৃষ্টিকর্তা নিয়েছেন।
কিন্তু আপনি হালাল (বৈধ) পথে আয় করবেন, না হারাম (অবৈধ) উপায়ে আয় করব সেই সিদ্ধান্ত একান্তই আমার।
যদি ধৈর্য ধারণ করেন, সৎ পথে থাকেন, তাহলে বৈধ উপায়ে ওই এক কোটি টাকা আয় করেই আপনি মারা যাবেন। আর অবৈধ উপায়ে হলেও ওই এক কোটিই, এক টাকা বেশীও না, কমও না!
আপনি যেই ফলটি আজকে বাড়িতে বসে খাচ্ছেন, সেটা হয়তো আমেরিকা কিংবা চীন থেকে ইমপোর্ট করা। ওই গাছে যখন মুকুল ধরেছে তখনই নির্ধারিত হয়েছে যে, সেটি আপনার কাছে পৌঁছাবে। এর মধ্যে কত পাখি ওই ফলের উপর বসেছে, কত মানুষ ওই ফলটি পাড়তে গেছে, দোকানে অনেকে ওই ফলটি নেড়েচেড়ে রেখে গেছে, পছন্দ হয়নি বা কেনেনি। এই সব ঘটনার কারণ একটাই, ফলটি আপনার রিজিকে লিখিত। যতক্ষণ না আপনি কিনতে যাচ্ছেন, ততক্ষণ সেটা ওখানেই থাকবে। এর মধ্যে আপনি মারা যেতে পারতেন, অন্য কোথাও চলে যেতে পারতেন, কিন্তু না! রিজিকে যেহেতু লিখিত, আপনি ওই ফলটি না খেয়ে মারা যাবেন না। রিজিক জিনিসটা এতটাই শক্তিশালী!
যে আত্মীয় কিংবা বন্ধু-বান্ধব আপনার বাসায় আসছে, সে আসলে আপনার খাবার খাচ্ছে না। এটা তারই রিজিক, শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তা খাবারটা আপনার মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। হতে পারে এর মধ্যে আপনার জন্য মঙ্গল রয়েছে। আসলে কেউ কারওটা খাচ্ছে না, যে যার রিজিকের ভাগই খাচ্ছে!
আপনি বৈধ না অবৈধ উপায়ে খাচ্ছেন, সেটা নির্ভর করছে আপনি সৃষ্টিকর্তার উপর কতটুকু আস্থাশীল তার ওপর। কেননা, সৃষ্টিকর্তা বলেন, দুনিয়ায় বিচরণকারী এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিকের দায়িত্ব আমি নিইনি। তাদের স্থায়ী এবং অস্থায়ী অবস্থানস্থল সম্পর্কে আমি অবহিত। (সুরা: হুদ, আয়াত: ৬)
সৃষ্টিকর্তা আরো বলেন, যে আমাকে ভয় করে, আমি তার জন্য কোনো না কোনো পথ বের করে দেবো। আর তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবো, যা সে ধারণাও করতে পারবে না। (সুরা: ত্বালাক, আয়াত: ২-৩)
মহান পালনকর্তা আমাদের সঠিক পথ এবং বৈধ রোজগারের ব্যবস্থা করে দিন এবং সকল প্রকার অবৈধ উপার্জন থেকে রক্ষা করুন এবং আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন।
(সংগৃহীত)