14/03/2024
📣ইতিকাফ বিষয়ক তথ্য ও পরামর্শঃ
লিখেছেনঃ ইবনে সাইফ
ই'তিকাফের গুরুত্ব ও ফযিলত আমরা সবাই জানি। অনেকেরই আল্লাহর ঘরে ই'তিকাফ করার ইচ্ছা থাকে তবে সামর্থ্য থাকে না। অনেকের সামর্থ্য থাকে তবে তথ্যের অভাবে ই'তিকাফ করতে পারে না বা বসলেও খুবই কষ্টের মধ্যে থাকে। এছাড়া অনেকেই ই'তিকাফ সম্পর্কে বিভিন্ন পরামর্শ চান। এই সব কিছু চিন্তা করে নিজের গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু লেখা লিখছি। এই লেখা থেকে কোন মুসলিম ভাই উপকার পেলে সেটাই আনন্দের হবে।
মক্কায় রামাদানের শেষ ১০ দিনে বিভিন্ন জায়গায় অনেক বেশি রেস্ট্রিকশন থাকে। চলাচলের জায়গা বন্ধ করে দেয়া হয়। আপনি এতে বিরক্ত হতে পারেন। তবে ২০-২৫ লাখের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সেন্ট্রাল সিস্টেম থেকে প্রতিটা এলাকা আলাদা করে সাজানো হয়। এগুলোর এন্ট্রি ও এক্সিট মানুষের ফ্লো অনুযায়ী ব্যালেন্স করা হয়। এগুলো যদি উন্মুক্ত করে দিত তবে হাজারো লোক পদদলিত হয়ে মারা যেত।
এখানে গতবছর গড়ে প্রতিদিন দেড় হাজারের বেশি মানুষ ইমার্জেন্সি চিকিৎসা সেবা পেয়েছে। ইমার্জেন্সি সেবা নিশ্চিতের জন্যও বেশ কিছু জায়গা খালি রাখা হয়।
গতবার ২৬ এর রাতে তারাবীহের পর দারুত তাওহীদ থেকে সাফা টাওয়ার পর্যন্ত গিয়ে আবার ফেরত আসতে কিয়ামুল লাইল শুরু হয়ে দু'রাক'আত মিস করতে হয়েছে আমার।
শুধুমাত্র ভীড়ের জন্য।
আর দয়া করে রামাদানের শেষ দশকে উমরাহ ছাড়া অবৈধ উপায়ে মুহরিম না হয়ে ইহরাম পরে তাওয়াফ করতে যাবেন না। এইসব প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে দেয়া কষ্ট আপনার সিয়াম ও কিয়াম দুইটাই বরবাদ করে দিতে পারে। আল্লাহ বুঝ দিক আমাদের।
গত বছরের অভিজ্ঞতায়-
🔘 বাদশাহ আব্দুল্লাহ এক্সটেনশনে ই'তিকাফ করা সহজ এবং সুবিধাজনক।
🟢 সুবিধা বলার কারণ,
১। এটার বিল্ডিংয়ে ওযুর ব্যবস্থা রয়েছে।
২। ওয়াশরুম খুবই কাছে তুলনামূলকভাবে। সালাতের সময় ছাড়া ওয়াশরুম খালিই থাকে।
৩। সালাতের সময় ছাড়া চলাচল উন্মুক্ত রাখা হয়।
৪। উমরাহকারীদের ভীড় এদিকে নেই।
৫। হাসপাতাল কাছেই আছে। জরুরী প্রয়োজনে দ্রুত যাওয়া যায়।
৬। বিশাল কম্প্লেক্স। বড় কর্মকর্তারা পুরোটা ঘুরে না।
৭। ওয়াশরুমের জন্য বের হলে ভিতরে ঢুকা তুলনামূলকভাবে সহজ।
৮। বাহিরে বড় চত্ত্বরে খাবার খেতে পারবেন।
🔺 অসুবিধা,
১। বাঙালি খাবার স্থান দূরে।
২। ইবরাহীম খলিল রোডের হোটেল অনেক দূরে। আজয়াদেরগুলো কিছুটা কাছে। (জারওয়াল বা তাইসীরে রুম রাখতে হবে)
৩। বাথরুমে গোসলের জায়গা নেই। আলাদা ব্যবস্থাগুলো খুলেছে কিনা জানি না।
৪। খাবার পানি সবসময় ঠান্ডা থাকে। নরমাল পানি দেয় না।
৫। ভিতরের এসি অনেক বাড়ানো থাকে। শীতের কাপড় লাগে মাঝে মাঝে।
৬। কিছু কিছু জায়গায় গতবার ইফতার পৌছেনি। এবার এই সমস্যা থাকবে না। এরপরও বুঝে শুনে জায়গা নির্ধারণ করতে হবে।
৭। ই'তিকাফ অবস্থায় তাওয়াফ করতে গেলে আপনাকে বাদশাহ ফাহাদ এক্সটেনশনে যেতে হবে। এই দিক থেকে যাওয়ার পথ খোলা থাকে খুবই কম সময়। রামাদানে খোলার রাখার সম্ভাবনা নাই বলা চলে। তাওয়াফ করা যাবে নাকি যাবে না সেটা আলেমদের জিজ্ঞেস করে নিবেন।
🔘 বাদশাহ ফাহাদ এক্সটেনশনের সমস্যা,
১। ওযুর জন্যও বাহিরে যেতে হয়।
২। ওয়াশরুম দূরে এবং একই ওয়াশরুম অনেক মানুষ ২৪ ঘন্টা ব্যবহার করে। ফলে ভীড় ২৪ঘন্টা লেগে থাকে।
৩। উমরাহকারীদের ও বাহির থেকে আগত মুসল্লিদের ভীড় বেশি থাকে। ফলে চলাচলের অনেক জায়গায় নিরাপত্তার কারণে বিভিন্ন সময় বন্ধ করে দেয়া হয়।
৪। বিভিন্ন ভিআইপিদের যাতায়াত থাকে ফলে প্রোটকল জনিত সমস্যাও তৈরী হয়।
৫। একটু পর পর পুলিশরা এসে ঘুম থেকে উঠায় দিবে।
৬। ওয়াশরুমের জন্য বের হলে ভিতরে ঢুকা অনেক কঠিন।
🔺 সুবিধা,
১। বাঙালি খাবার হোটেল কাছে।
২। আজয়াদ ও ইবরাহীম খলিল রোড কাছে।
৩। সহজে তাওয়াফের জন্য যাওয়া যায়। (বৈধভাবে যাবেন গেলে)
৪। নরমাল পানি পাওয়া যায়।
৫। সালাতের সময় ভিতরে থেকে জায়গা বদলিয়ে কা'বা ভিউতে গিয়ে সালাত পড়া যেতে পারে সহজে।
✳️ যারা ই'তিকাফে বসবেন তাদের জন্য পরামর্শ,
১। শুকনা খাবার খাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে।
২। প্রস্রাব পায়খানার ক্ষেত্রে নিজের কন্ট্রোল থাকতে হবে। একটু পরপর প্রস্রাবের সমস্যা বা পায়খানার সমস্যা থাকলে আপনি হারামের হুদুদে অন্য কোথাও ই'তিকাফ করাই ভালো।
৩। খেজুর, টক দই, রুটি, পনির খাওয়ার অভ্যাস থাকতে হবে ১০ দিনের জন্য।
৪। প্রচুর হাটার অভ্যাস তৈরী করুন। দৈনিক ১০-১৫ কি.মি. 🙂
৫। বিভিন্ন সময় চলাচলের জায়গা নিরাপত্তার জন্য বন্ধ করা হবে। তখন ধৈর্যের দরকার হবে।
৬। মক্কার হারামের কোনদিকে কি আছে, কোন দিকে গেলে আপনার বসার স্থান, এগুলো সব চিনে রাখতে হবে। অধিকাংশ কর্তব্যরত পুলিশরা এগুলো চিনে না।
৭। কারো সাথে সাক্ষাতের জন্য মাসজিদের বাহিরে জায়গা নির্ধারণ করবেন। ভিতরে নির্ধারণ করলে আপনি কোন দিনও সেই জায়গা খুজে পাবেন না।
৮। প্রয়োজনীয় ওষুধ, কাগজ, কিছু টাকা, ভিসার কপি, পাসপোর্ট কপি, কলম, মিসওয়াক, ট্রাভেল সাবান, টিস্যু এগুলো ছোট্ট একটা হ্যান্ড ব্যাগে রাখবেন। পিঠের ব্যাগ না। সাথে একটা জায়নামাজও রাখতে পারেন। এওএবারে পাতলাগুলো।
৯। সিভিট জাতীয় ট্যাবলেট রাখবেন সাথে।
১০। পাওয়ার ব্যাংক ২০ হাজার এমএইচের রাখবেন সাথে অন্তত একটা। এই চিন্তা করবেন না যে আমি ফোন চালাব না তাই লাগবে না।
১১। সাউদিতে থ্রি পিনের সব চার্জিং পোর্ট। তাই থ্রী পিনের এডাপ্টার আনবেন অবশ্যই। ১০ রিয়ালের বাজে কনভার্টার দিয়ে বহুকাল লেগে যাবে চার্জ হতে।
১২। মোটা জায়নামাজ ও ইহরামের কাপড় নিয়ে ঢুকবেন। জায়নামাজ নিচে বিছিয়ে রাখবেন ও শুবেন এতে। ইহরাম গায়ে দিবেন। সালাতের জন্য পাতলা জায়নামাজকে মাথার বালিশ বানাবেন। পুরাই ভি আইপি ঘুম! 😊
১৩। কাপড়চোপড় ও ব্যাগ রাখার জন্য কয়েকজন মিলে একটা রুম ভাড়া নিয়ে রাখবেন।
১৪। ঈদের চাঁদ উঠলেই বের করে দিবে। দ্রুত বের হয়ে ঈদের সালাতের প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন সেই পরিকল্পনা করবেন।
১৫। রেজিস্ট্রেশন না পেলে আপনাকে ১৯ বা ২০ তারিখ রাতেই জায়গা দখল করতে হবে।
১৬। ফজরের পর থেকে ৭টা পর্যন্ত এরপর ৭টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এরপর যোহর পর্যন্ত ঘুমাতে পারবেন। এই রেজিস্ট্রেশন না থাকলে এই তিনবার ডেকে উঠায় দেয়া হবে। এরপর আপনি যোহরের পর বা আসরের পর বিশ্রাম নিতে পারবেন।
১৭। হালকা কাপড় রাখবেন। নরমাল স্যান্ডেল রাখবেন তবে মোজা পড়া যায় এমন।
১৮। স্পঞ্জের নরম স্যান্ডেল ব্যবহার করবেন। ভীড়ের হাটার মধ্যে কারো পায়ে চাপ পড়লেও যেন সে ব্যাথা কম পায়।
১৯। খাবার স্যালাইন রাখবেন।
রামাদানে ই'তিকাফ করার জন্য দরকার মানসিক শক্তি ও আল্লাহর তাওফিক। তাই আল্লাহর কাছে তাওফিক কামনা করুন।
আপডেট: বাদশাহ ফাহাদ এক্সটেনশনেও এখন নরমাল পানি পাওয়া যায় না। অর্থাৎ পুরো হারামে কোথাও নরমাল পানি নেই বলা যায়।
আপডেট: ১৭ মার্চ বা সাউদির ৭ রামাদান ১৪৪৫ এ নুসুক থেকে ই'তিকাফের রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।