08/07/2025
ফুকতার কে ফিরে দেখা -
ছোট গল্পে- জানস্কার-
পূর্নে ক্যাম্পের দিন রাত্রি -
স্বপ্ন যখন বাস্তব ......
কিছু পাহাড়-বিলাসী মানুষ,যারা পাহাড়ের ধমনী শিরা উপশিরা খুঁজে গিয়ে ক্লান্তি তে ঝিমিয়ে পরে না , বরঞ্চ আরো উদ্দীপিত হয় ওঠে, তারা আসে কখনো নদী কে অনুসরণ করে, গিরিবর্ত্ম পার হয়ে, এই পথে। আজকের দ্রষ্টব্য পাদুম থেকে পূর্নি বা পূর্নে গ্রাম, ফুকতার ট্রেকিং এর বেস ক্যাম্প সাইট। আমার চেনা সেইরকম কজন কে নিয়ে ...।। পূর্নে যাবার পথে যা দেখলাম তা চোখের সীমানা ছাড়িয়ে মনের আঙিনায় বাসা বেঁধেছে।।
আমাদের প্রথম দ্রষ্টব্য ছিলো গ্যালওয়া রিঙ্গা , পাঁচ ধ্যানি বুদ্ধ , বিভিন্ন মুদ্রায় একটি সুবিশাল পাথরে খোদিত।পাশে বয়ে চলেছে পান্না সবুজ সারাপ চু। অদ্ভুত প্রশান্তি চারিপাশে , উলটোদিকে নদী, সামনে পাঁচ ধ্যান মগ্ন বুদ্ধ , ঘাড় ফেরালেই হৈমন্তিকা পপলারের সারি আর তার মাথার উপর নীল, জমাট নীল চাঁদোয়া ।। অসাধারন পরিবেশ ও তার আবেদন।।
ধূসর, বাদামি,কালো পাহাড়ের ঢালজোড়া ভাঁজ এসে মিশছে নদীর কিনারে। সবুজনীল নদীর নেশায় মাতোয়ারা সে।গাড়ি চলেছে সারাপ চু কে অনুসরণ করে। বরফ গলছে একটু একটু করে মিশছে পান্না নীল সারাপের গা য়ে এসে। তার বরফ কঠিন বর্ম গলে যাচ্ছে একটু একটু করে,দুর্বার বেগে মিশে যেতে চাইছে বহতা নদীর সাথে। হিমবাহ না,আসলে পাহাড়ের মন গলছে।
এবার বিরতি পাহাড়িয়া নদীর বুকের কাছে। চোখের সামনে ফেনিল সারাপ বহু রঙ্গে বয়ে চলেছে অবিরাম আমাদের সব কথা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে ওর যাবার কোলাহলে।সর্পিল,আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে ধাবমান কোন অসীমের টানে । আমি সামনে থাকতে তোমার অন্য কোনো বিষয় কথা বলার সাহস কি করে হয় , আমার প্রাণোচ্ছল গতি র দাবি তোমায় স্তব্দ করে দেওয়ার জন্য কি যথেষ্ট নয় ---- আবেদন টা ঠিক যেন এইরকম।।তার শরীর জুড়ে তোলপাড় , তচনচিয়া জলরাশি।
আবার পথ চলা। পাহাড়ি পথে চলা মানে ই কিন্তু দ্রস্ট্যবের মধ্যে থাকা।।কেউ যদি এক জায়গা থেকে গাড়িতে বসে থেকে পৌঁছনো র অপেক্ষা করতে থাকে তাহলে তার পাহাড়িয়া পথে যাওয়া টাই বেকার সময় নষ্ট। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে চমক ,এ জানালা ও জানালা র দিয়ে দৃষ্টি ক্রিস ক্রস খেলা । মাঝে মধ্যে খেলনা বাটি র গ্রাম গুলো তে বিরতি।। সহজিয়া আন্তরিকতায়, মেঠো সারল্যে ভেসে যাওয়া।অমোঘ সেই টান। উপেক্ষা করা যায়না।সে ডাকে সাড়া দিয়ে ছুটে যেতে ইচ্ছে হয়, একবার না বারবার! সেইরকম ই এক গ্রামের চেয়ে ও ভিরান জায়গা য় আমাদের লাঞ্চ break ।লাঞ্চ এর মেনু খুব সাধারণ - আলুপরাঠা তবে লাঞ্চ লোকেশন টা মার কাটারী ।
তখন মহাসমারোহে বিকেলে নামছে , জানস্কারী পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে। পূর্নে তে পৌঁছে দেখি আমাদের ক্যাম্প almost ready। পুরো trekkers ক্যাম্প , কোন বিলাসিতা নেই।সাদা সাপটা অথচ ঠান্ডা কে টেক্কা দিতে সিদ্ধহস্ত। ভিতরে দুজন করে শুতে পারবে , মাটি তে বিস্তার, দেয়া আছে minus 30 to 35 deg centrigrade কে পাল্লা দিয়ে শরীর গরম রাখার মতন sleeping ব্যাগ। আমাদের শয়ন কক্ষের পাশে দুটি বড়ো ক্যাম্প। একটি kitchen tent ও এর একটি dining টেন্ট। অতি সাধারণ , খাবার যায়গা টেন্টে শুধু ই একটি table তাতে খাবার সাজানো যে যার মতো নিয়ে খাও। ক্যাম্প site দেখে বেশ কিছুজন আনন্দে উচ্ছাসিত।। স্বপ্নে ভেবেছিলেন কোনসমায় আকাশ এর তলায় , পাহাড় ঘেরা চত্বরে , এইকম ভাবে দিন রাত্রি কেটে যাবে।আজ স্বপ্নের ডানা উড়ানে।
সন্ধ্যা নামলো চাঁদের অনুমতি নিয়ে, ঠান্ডা র কামড় প্রখর না হলে ও জানান দিচ্ছে।। মাথার ওপরে তারাদের বাসরঘর , এক আকাশ তারা । দিনভর তার শরীর জুড়ে নীল,আরো ঘন নীল বসন আর রাত্রি হলেই তার কালো রেশমের শাড়িতে হাজার তারার সলমাজরি । চোখ ফেরানো দায়। মিষ্টি ও রাধা কোন একটা app দেখে প্ল্যানেট identify করছে, মাথার ওপরে আকাশ গঙ্গা। পাহাড়ি অন্ধকার ফুঁড়ে চাঁদের আলোয় ক্যাম্প সাইট উদ্ভাসিত। গোল করে বসে , আগুনকে সাক্ষী রেখে চলছে গানের আসর। একের পর এক - ব্রজ র গান , পবিত্র দা আর সুভাষের সঙ্গত, টিঙ্কু দি গান, স্নেহা অসাধারণ আবৃত্তি আর উত্তাপ। জীবনে এমন রাত অন্যের স্বপ্নে আসে যাঁরা ধারণ করেছিলাম নিজ মধ্যে। । ওই কড়া ঠান্ডা কে জব্দ করে আমাদের indomitable spirit এর জোশ হাই ।
রাতের খাওয়া র ডাক পড়লো। ডাইনিং ক্যাম্পে । দিম দিমে আলো , একে অপরের মুখ দেখা দায় তা আবার টুপি, মাফলার এ ঢাকা। তার মধ্যে গরম গরম রুটি/ভাত , ডাল, ফুলকপির তরকারি দিয়ে সাঙ্গ হলো রাতে র খাবার ।
রোমাঞ্চকর বেডরুম । জ্যাকেট, টুপি , ট্রাকস পরে স্লীপিং ব্যাগ এ সিঁধতে হবে। সে এক memorable অভিজ্ঞতা।সবাই হাম হাম গুড়ি গুড়ি করে ক্যাম্পে ঢুকলাম। মিঠু দি দের camp এ এক সাথে সাত জন গুতোগুতি করে ঢুকেছে।চলছে একের পর এক গান। , আবৃত্তি ,mashup। আর আমরা খোলা আকাশের তোলা য় ক্যাম্প বাড়িতে শুয়ে শুয়ে চাঁদমাখা রাতে উপভোগ করছি নিঃশব্দে সেই আবেশ ।
সকালে উঠে আমার প্রাপ্তি - শর্মিষ্ঠা দি , ব্রজ , মিঠু দি জড়িয়ে ধরে বলল -" মৌমিতা, এইরকম একটা রাত উপহার দেবার জন্য তোমায় অসংখ্য ধন্যবাদ"
----- From the page of Travel Diary by Moumita Mukherjee