31/10/2024
আজ কালীপুজো, তাই আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি বীরভূমের অতি জাগ্রত একটি কালী মায়ের মন্দিরের সন্ধান নিয়ে । যে মন্দির বছরের পর বছর ধরে নিজের জাগ্রত হওয়ার প্রমাণ দিয়ে আসছে।
নলহাটির নাম শুনলেই মাথায় আসে , নলাটেশ্বরী মন্দিরের কথা কিন্তু এই নলহাটি থেকেই মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এক ব্যতিক্রমী এবং ঐতিহাসিক কাহিনীতে গাঁথা এক মন্দির। আকালিপুরের গুহ্যকালি।
https://youtu.be/aEUP5Yd6I-o
তবে সম্প্রতিকালে এই জায়গার সাথে ধীরে ধীরে অনেকেই পরিচিত হচ্ছেন।
কিছু youtube ভিডিও দেখে জানতে পেরেছিলাম অকালীপুরের কথা। যেখানে থাকেন খুবই জাগ্রত মা গুহ্যকালি।
সেই থেকেই এই জায়গা সম্পর্কে জানার আগ্রহটা বেড়েছিল।
নলহাটি স্টেশনে নেমে লোকজনকে একটু জিজ্ঞাসা করে পায়ে হেঁটে অনাসেই চলে যায় নলহাটি বাসস্ট্যান্ডে। হেঁটে যেতে সময় লাগবে ১০-১৫ মিনিট। বাসে করে চলে যান ভদ্রপুর (state bus হলে সময় কিন্তু কম লাগবে)। ভাড়া লাগবে ১৫ টাকা, সময় লাগবে ৩০ মিনিট। এবং সেখান থেকে টোটোয় করে পৌঁছে যান একদম মন্দিরে্র সামনে। ভাড়া ১৫/-।
অথবা
নলহাটিতে নেমে টোটো রিজার্ভ করেও নিতে পারেন।
মা এখানে খুবই জাগ্রত। প্রত্যেকদিন রাতে নাকি মন্দির থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন মা ,সেই কারণেই প্রত্যেকদিন রাতে মাকে শয়ন করিয়ে মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি কালীপুজোর দিনও তার ব্যতিক্রম ঘটে না। সেই কারনেই কালীপুজোর রাতে সব জায়গায় যখন পুজোপাঠ চলে,বন্ধ থাকে এই মন্দিরের দরজা।
প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি পুরনো এই গুহ্য কালীমন্দির। মন্দিরের গর্ভগৃহে সর্ববেদীতে পা মুড়িয়ে বসে আছেন দেবী। মা এখানে দ্বিভূজা।
এই মন্দিরের ইতিহাস শুরু হচ্ছে মগধরাজ জরাসন্ধ্র সময় থেকে। মগধরাজ জরাসন্ধ্র গোপনে এই গুহ্যকালী বিদ্রোহের পুজো করতেন।
তারপরে কাশি রাজ চৈত সিং এর হাত হয়ে নানান বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে মায়ের বিগ্রহ পৌঁছায় মহারাজ নন্দকুমার এর কাছে।
মহারাজ নন্দকুমার এর হাতে গুহ্যকালী মায়ের এই বিগ্রহ আসার পরেই মা কে প্রতিষ্ঠার তোরজোর শুরু করেন তিনি।
তবে কাশি রাজ চৈত সিং এর কাছে এই মূর্তি দেখে আপ্লুত হয়েছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস। এবং তখন থেকে মায়ের বিগ্রহের উপর লোভ হয় তার। এই মূর্তি নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন সুদূর লন্ডনে ।এবং নন্দকুমারের হাতে মায়ের বিগ্রহ আসার পরেই মিথ্যে ষড়যন্ত্র করে মহারাজ নন্দকুমারকে আদালতে তোলেন ওয়ারেন হেস্টিংস এবং আদালতে নন্দকুমারকে ফাঁসির আদেশ শোনানো হয়।যা ছিল ব্রিটিশ শাসনে প্রথম ফাঁসি।
মহারাজের ফাঁসি হলেও অসমাপ্ত মন্দির সমাপ্ত করেছিলেন রাজ পরিবারের লোকজন।
বলা হয় মহারাজের ফাঁসির পরপরি , মন্দিরটি সম্পূর্ণ তৈরি করার সময় মন্দিরে ফাটল দেখা গিয়েছিল,এমনকি মা নাকি স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন যে তার মন্দিরের প্রয়োজন নেই।
পরবর্তীতে উত্তরাধিকারীরা মনে করেছিলেন মা যখন নিজেই অসম্পূর্ণ মন্দিরেই থাকতে চান সেই কারণেই মন্দির সংস্কারনে উদ্যোগী হননি কেউ ই।
এই গুহ্য কালী মায়ের মাহাত্ম্য এতটাই যে, এই দেবীকে সাধনা করলে নাকি সাধক দিব্যদৃষ্টি লাভ করেন, যে কোন অলৌকিক কাজ করতে পারেন সহজেই।তবে এই দেবীর সাধনা করা খুবই কঠিন, বলেছিলেন স্বয়ং বামদেব।
মন্দিরের সামনেই রয়েছে ব্রাহ্মণী নদী। বর্ষাকালে এর জল উঠে এসে মায়ের মন্দিরের সিঁড়িগুলো স্পর্শ করে আবার নেমে গিয়ে গঙ্গার মোহনায় মিলিয়ে যায়। পাশেই রয়েছে মহাশ্মশান।
সবমিলিয়ে একদিনের সফরে আসলে এই জায়গা যে কারোর মন জয় করে নেবে।
রটন্তি কালীপুজোর দিন বেশ জাঁকজমক ভাবে এই জায়গায় মায়ের বিশেষ পুজো হয়।
মন্দিরের পাশেই রয়েছে পুজো দেওয়ার জন্য ডালা কেনার দোকান, সেখান থেকে ফুল বা পুজোর ডালা কিনে অনায়াসে পুজো দেওয়া যায়। সকাল ১১টা থেকে পুজো শুরু হয় ।
এখানে নিত্য ভোগের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সকাল দশটার মধ্যে বলে রাখতে হবে।
*যোগাযোগ
দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় (পূজারী ) - 9474831916 / 8670355422
*পূজা সামগ্রী
আদি ডালি ভান্ডার - 8972183183
আদি অর্ঘ্য পুজা ভান্ডার - 9732269132
**মন্দির সম্পর্কে একটা বই আছে। বর্তমান যিনি পূজারী দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় তার লেখা, বেশির ভাগ তথ্য সেখান থেকেই পাওয়া।
এই সংক্রান্ত একটা ভিডিও বানিয়েছি,ভালো লাগলে দেখতে পারেন...
https://youtu.be/aEUP5Yd6I-o