21/06/2024
১০০০+ হাজী এবার হজ্জ্বে মারা যাওয়ার আসল কারণ: গত ২০২৩ সালের হজে ও একই কাহিনী হয়েছে।
সৌদি আরবে হাজীদের জন্য গাড়ি গাড়ি পানি হাজির। রাস্তায় রাস্তায় মোড়ে মোড়ে মক্কাতে পানি দেয় হাজিদের। পানির কোম্পানি অন্তত ১০০ টা হবে। ছবিতেই দেখেন ৫ কোম্পানির বোতল দেখানো আছে।
গাড়ি নিয়ে যখন পানি দিতে আসে তখন চাইলে আপনাকে এক কেস মানে ২৪ বোতল দিয়ে দিবে।পানির দাম কিন্তু কম না।
500-600 ml এর বোতল ১ রিয়াল
250-350 ml এর বোতল ০.৫ রিয়াল
এইদেশে আবার তেলের দাম কিন্তু লিটারে ১.১৫ রিয়াল।
অর্থাৎ তেল থেকে পানি দামি কিন্তু পানি বিতরনে কোন কার্পণ্য করে নাই একটা স্পেছিফিক ১০ জিলহজ্জ্ব ছাড়া।
আরাফার ময়দানে অন্তত ১ কোটি বোতল পানি বিতরণ করেছে। মানুষ শেষ দিকে যখন Washroom এ পানি ছিল না ,তারা পানির বোতল নিয়ে গেছে washroom এ।
কিন্তু বিপত্তি বাধে রাতে মুজদালিফা থেকে ,কোথাও পানির বোতল নাই।অল্প কিছু যায়গা ছাড়া। আরাফা থেকে আমরা যে পানি নিয়ে গিয়েছি তা খেলাম মুজদালিফায়। পানি শেষ সবার কাছেই।এত পানি দেয় সবসময় তাই সবাই ভেবেছে সামনে জামারাতে পাথর মারতে যাওয়ার পথেও পানি থাকবে। কারণ অলয়েস ওরা সব জায়গায় পানি দেয়।
ফজরের নামাজের শেষেই সবাই হাটা দিলো জামার পথে। মুজদালিফা থেকে জামারা ৬ কিলোর মত। হাটছে মানুষ হাটছে ব্যাগের পানি শেষ কিন্তু কোথাও পানির বোতল নাই আর।
পানি নেওয়ার কলও নাই। আস্তে আস্তে সূর্য উকি দিচ্ছে ,এক মানুষ ভাপসা গরমে সবাই ঘামানো শুরু। নাই পানি তো নাই পানি। পুলিশকে জিজ্ঞাস করলে বলে গুদ্দাম মানে সামনে । অল্প কিছু পানির সে কল সেখানে বিশাল লাইন ও মারামারি।
গরমে-ঘামে ও পানির অভাবে মানুষের এই অবস্থা কারো মুখ দিয়ে লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক শব্দও বের হচ্ছিল না। জামারায় পাথর মারতে যাদের ৪ তালায় উঠাইছে তাদের তো পাহাড় বাইতে হইছে। এত ভয়াবহ কষ্ট হইছে। যা আমার কাছে এখনো এক ভয়াবহ স্মৃতি। জ্বী হজ্জের স্মৃতি আবেগের হলেও সেদিন যারা জামারা থেকে মিনা গেছে এবং তাবু দূরে ছিল তাদের কাছে এই স্মৃতিটা আতংকের।
জামারা থেকে বের হয়ে যারা মিনার দিকে হাটা দিছে তারাই মূলত মারা গেছে,যারা মক্কা গেছে তারা বেচে গেছে ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জামারা থেকে আমাদের মিনার তাবু অন্তত ৭-৮ কিলো দূরে ছিল। তখন বাজে সকাল ৯.৩০।
৫ মিনিটও হাটা যাচ্ছিল না এতগরম-এতগরম এবং No water।এমনকি পানির বোতলও নাই আমার কাছে পরে রাস্তা থেকে অন্যের খাওয়া বোতল কুড়িয়ে আমি পানি ভরছি।কে খাইছে,বোতল ময়লা কিনা বিবেচনা করতে পারি নাই।
কিন্তু এই ৩৩০ ml এর বোতল কাউকেই হেল্প করছিল না। ৫ মিনিট পর পর পানির পিপাসা ও গরমে হাসফাস। কোথাও ছায়া নাই,দাড়ানোর জায়গা নাই। ৫০ ডিগ্রী+ তাপমাত্রা এবং পানি নাই তো নাই ই।
কোথাও বসতেও দিচ্ছিল না পুলিশ। পুরো রাস্তা ধরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল মানুষ। কোন Paramedic team নাই ,পুলিশ থেকে কোন হেল্প নাই। অ্যাম্বুলেন্স ছিল অনেক কম। চূড়ান্ত বাজে আচরণ করছিল পুলিশ। Heat Related ইস্যুতে অসুস্থরা লিটারেলি কোন হেল্প পায় নাই।
নিজের হেল্প নিজেকেই করতে হইছে। আমার আম্মু অসুস্থ হওয়ার পর নিজেই wheel chair নিয়ে আগাইতে হইছে।
অন্তত ২-৩ হাজার মানুষের মারা যাওয়ার কথা ১০ ই জিলহজ্জ্ব।১০০০+ মৃত্যুর সংখ্যা,নিখোজ লোক আরো বেশি। যারা নিখোজ তাদের বাচার সম্ভবনা কমই।
এখন রাস্তায় কেউ পানি দিলে মনে হয় ,ইস ১০ ই জিলহজ্জ্ব জামারা থেকে মিনা যাওয়ার পথে যদি পানি দিত তাইলে এত কষ্ট হত না। আমি জানি এটা আমাদের রিজিকে ছিল ,যারা মারা গেছে তারা শহীদী মৃত্যুবরণ করছে। সৌভাগ্যব্ন তারা অবশ্যই।
কিন্তু এই বিষয়টা আমার মাথায় যাচ্ছে না,পানির কোন অভাব ছিল না। তাও কেন পানির কষ্ট দেওয়া হলো ,মিনার তাবুগুলায় কয়েক কোটি পানির বোতল ছিল। প্রতিটা তাবু আটকে রেখেছিল ,তাবুগুলা থেকে ৪-৫ কেস পানি বের করলেও মানুষগুলা এইভাবে কষ্ট পেত না।
হজ্জ্ব মানে কষ্ট,এই হাদিসের উপর আমল করানোর জন্য মেবি ইচ্ছাকৃতভাবে সৌদি হুকুমত এই কাজ করলো কিনা কে জানে। নেও কষ্ট পাও।
আমার কাছে মনে হয় ,মুজদালিফা থেকে জামারা-জামারা থেকে মিনা একটা মৃত্যুফাদ ছিল। আল্লাহ বাচাইয়া আনছে ,নাইলে কোন সম্ভবনা ছিল না বাচার।
হজ্জ্ব young age এ করেন সবাই আর বয়স্ক বাবা মাকে একা পাঠাইয়েন না। আমাদের কাফেলার বয়স্ক ব্যক্তিদের দেখছি কি অবস্থা।প্রতিটা লোক কান্না করছে আমার কাফেলার।
আল্লাহ ,মৃতহাজীদের জান্নাত নসিব করুন আর হারিয়ে যাওয়া হাজীদের খোজ দিন 🥰।
লিখেছেন: ডা: সাদিকুর রাহমান