30/03/2023
#মাইনী_ট্যুর (পর্ব ২)
সংগৃহিত
রিসোর্টের নাম আরন্যক। অবস্থান রাঙ্গামাটি শহর।
পরিচালনায়- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাধারণত তার প্রতিষ্ঠানগুলো খুবই দক্ষতা ও সক্ষমতার সাথে পরিচালনা করে থাকে।
এ ব্যাপারে তাদের সুনাম সুবিদিত।
সেনা কল্যাণ সংস্থা, রাওয়া, ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজ, মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, গলফ ক্লাব গুলো, এবং বিভিন্ন রিসোর্ট উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
চাকরিরত এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের এসব সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ সুবিধা থাকে।
এসব সুবিধা অসুবিধা নিয়ে এই আলোচনায় আমি কিছু বলছি না। শুধু এটুকু আগাম বলে রাখি নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা সাধারণত সেনাবাহিনীর মতো এইসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। ইদানিংকালে তাদের একটা বড় অংশ পেশাগত দায়িত্বের বাইরে এসব সুযোগ-সুবিধাকেই বড় করে দেখছে।
এসব প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করতে চাকরিরত অফিসার ও অন্য সেনা সদস্যদের দায়িত্ব দিতে হয়।
যে সকল অফিসার বা অন্য পদবীর সৈনিকরা এর সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে তারা দোকানদারি করতে করতে পেশার কাম কাজ ভুলে যান। বড় কথা হচ্ছে তাদের সৈনিক সুলভ এটিচিউডের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।
তখন গোলগাল নাদুসনুদুস চেহারা নিয়ে পিটি প্যারেড বা পেট্রোলিং করতে ভালো লাগেনা। ফলশ্রুতিতে যা হবার তাই হয়।
সেনা কল্যাণ সংস্থার মতো এই সমস্ত জায়গায় অবসরপ্রাপ্ত অফিসার ও সৈনিকদের কাজে লাগানো যেতে পারে। তাতে প্রতিষ্ঠানগুলোও ভাল চলবে এবং চাকরিরত সেনা সদস্যরা এসব ঝুটঝামেলা থেকে রেহাই পাবে। কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে।
আরণ্যকের বর্তমান অবস্থান খুবই সুন্দর। দুইটা ভিআইপি রুম আর সাতটা সাধারণ ফ্যামিলির রুম রয়েছে। সামনে পিছনে বামে লেক দিয়ে পরিবেষ্টিত। সারি সারি ফুলের বাগান, আম গাছ- জাম গাছ, বিশাল আকৃতির পাম গাছ ছিমছাম অ্যাটেনশন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বামের লেকের ওপারে টিলায় রয়েছে সুইমিং পুল ও জলকেলি। গত বছর এই সময় লেকে এতটা পরিমাণ পানি ছিল যে নৌকা চালিয়েছে এখন সেখানে সবুজ ধান গাছের বারন্ত শরীর।
লেকে ভ্রমণের জন্য জেট স্কি ও কাইকিং এর ব্যবস্থা আছে। টিলার ঢালে দুর্বা ঘাসে বসে পূব গগনে চাঁদ ওঠার দৃশ্য দেখতে অপার তৃপ্তি লাগে। কিন্তু সন্ধার পরে সাধারণ পর্যটকদের এখানে থাকতে বারণ।
সামনের লেকের ওপারেই রয়েছে প্রাক্তন এক মন্ত্রীর বিশাল প্রাসাদসম রিসোর্ট। এর বিশেষত্ব হচ্ছে তাদের নিজস্ব নৌযান দিয়ে স্থলভাগের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। বাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনীর কাছাকাছি হওয়ায় শান্তি বাহিনীর অত্যাচারের কোন ভয় নেই। কি কপাল!!
২০ টাকার টিকিট কেটে যেকোনো পর্যটক এখানে ঢুকে ঘোরাফেরা করতে পারে, ছবি তুলতে পারে, রেস্টুরেন্টে খেতে পারে। কিন্তু সন্ধ্যা হবার সাথে সাথে তাদের এই স্থান ত্যাগ করা বাধ্যতামূলক। এমন টাইট ফিট নিয়ম থাকার কারণে বাণিজ্যিকভাবে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুব সুবিধা করতে পারে বলে মনে হয় না।
আমি তিন বছর ধরে এই বসন্তকালে এখানে অবকাশ যাপনের জন্য আসি। সব আলোচনা সমালোচনার ঊর্ধ্বে কথা হচ্ছে - আমার এখানে ভীষণ ভালো লাগে।
চিটাগং থেকে মুভ নিয়ে রাঙ্গামাটি আগমন,
রাঙ্গামাটি অফিসার্স মেসে অবস্থান, ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে কামে আকামে গমন, সিনিয়রদের ধমক সোহাগ, জুনিয়রদের শ্রদ্ধা কখনো চাপাবাজি, স্কট নিয়ে চাকমা পাড়ায় গমন-ভিডিও ক্যাসেট সংগ্রহ করা পরিশেষে জলযান ঘাটে স্পিড বোটে উঠে মাইনীমুখে উদ্দেশ্যে গমন। স্পষ্ট মনে আছে সোনালী ব্যাংক থেকে বিশেষ অনুরোধে ঢাকায় এক দুই মিনিটের জন্য কথা বলা এই চৈত্র মাসের ইফতারের চেয়েও বেশি তৃপ্তিদায়ক ছিল।
অজস্র অফিসারের চেহারা আমার এই মুহূর্তে ভেসে উঠছে যাদের সান্নিধ্য আমাকে একজন দায়িত্ববান মিলিটারি অফিসার হতে সহায়তা করেছে। রাঙ্গামাটিতে তখন ছিল ১৭ বেঙ্গল। তাদের আয়োজনে ৩০৫ ব্রিগেডের অধীনস্থ সকল অফিসার পরিবারসহ রাঙ্গামাটি লেকের মাঝে একটা ছোট পাহাড়ের উপর পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের যোগ দেয়। শিক্ষিত মার্জিত আর্কিটেক্ট সিও ভাবী ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে গতানুগতিকতার ব্যতিক্রম।
সেনাবাহিনীর বিচিত্র জীবনের একটা উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে দেশের বা দেশের বাইরে যে কোন প্রান্তেই যাক না কেন সেখানেই সেনানিবাসের সম্পূর্ণ ছোঁয়া থাকবেই থাকবে। লোকগুলো সব একই ডাইসে তৈরি বলে আচার-আচরণ কথাবার্তা, উত্তর- প্রতি উত্তর একই রকম।
ব্যক্তি পরিবর্তনে সচরাচর খুব একটা ঘাটতি পরিলক্ষিত হয় না।
রাঙ্গামাটি শহরটি পরিপাটি-যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন। তবে এটিকে সুইজারল্যান্ড এর "জুরিখ" বানানো কোন ব্যাপারই না।
স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, প্রশাসন এবং পর্যটনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের একটু বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই লাগেনা। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন্স, পার্বত্য বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি- পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে খুব সহজেই বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারবে যদি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে উদগ্রীব থাকেন।
খুবই খারাপ লাগে যখন দেখি আমাদের দেশের মেধাবী ছেলেমেয়েগুলো পড়াশোনা না করে সস্তার জিপিএ ফাইভ পেয়ে খুশিতে ডিগবাজি খায় আর চাকরি বাজারে চাকরি পায় না। অথচ এরা হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ক্লাস মেধাবী সন্তান।তদ্রুপ এরকম সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রগুলো যখন অবহেলিত থাকে তখন তা দেখে কষ্টে বুকটা ফেটে যায়।
পাঠক সময় সুযোগ হলে পার্বত্য অঞ্চলে ঘুরে আসুন, রাঙ্গামাটির শুভলং মাইনী বাংলাদেশের জন্য আল্লাহর বিশেষ অবদান। কাপ্তাই লেকে চাঁদনী রাতে ভাসতে ভাসতে বুক ভরে অক্সিজেন নেবেন, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবেন আর ইয়ারফোনের তার গরিয়ে গরিয়ে আপনার কানে প্রবেশ করবে - "চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে উছলে পরে আলো"..... আপনার নিজের অজান্তে দু' ফোঁটা অশ্রু গড়াবে।
কত না বলা কথা লেকের এখানে সেখানে দূর পাহাড়ের কোলে গিয়ে আছাড় খাবে-আপনার মনে হবে এগুলো বলার জন্যই আপনি এখানে এসেছিলেন।
নোট: লেখক আব্দুল ওয়াহাব মিনার
ফেসবুক টাইম লাইন থেকে সংগৃহিত।
Ikha Tours & Travels
২৬/০৩/২০২৩