19/08/2025
📌 উমরাহর লাগেজে কী কী নিয়ে যাবেন?
উমরাহর লাগেজে অনেকেই অপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিস নিয়ে যায়, প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে আবার ভুলে যায়।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং অন্যদের পরামর্শ অনুযায়ী এই লেখাটি সাজালাম। আশা করি উমরাহ প্রস্তুতিতে কাজে আসবে, ইনশা আল্লাহ।
✅ ১. বাংলাদেশ থেকে ডিরেক্ট ফ্লাইট জেদ্দায় হতে পারে বা মদীনায়। মদীনায় ফ্লাইট হলে ইহরাম পরার তো দরকার নেই, যেদিন মক্কায় যাবেন সেদিন ইহরাম পরবেন।
আর সরাসরি জেদ্দায় ফ্লাইট হলে বাসা থেকে ইহরাম পরে যেতে পারেন। অথবা এয়ারপোর্টে একটু আগে আগে গেলে ইমিগ্রেশন শেষ করে ইহরাম পরতে পারেন।
আর ট্রানজিট থাকলে ট্রানজিটে গিয়েই ইহরাম পরতে পারেন।
ইহরাম বাসা থেকে না পরে গেলে অবশ্যই সেটা হ্যান্ড ব্যাগে রাখবেন, লাগেজে না।
✅ ২. মক্কা-মদীনায় গিয়ে পাঞ্জাবি পরতে ভালো লাগে না। দেখবেন বেশিরভাগই জুব্বা পরছে। আর ঐখানে জুব্বা পরতে এতো কমফোর্টেবল লাগে, বলে বুঝানো যাবে না!
প্রথমবার আমি অনেকগুলো পাঞ্জাবি কিনেছিলাম ঐখানে গিয়ে পরার জন্য। কিন্তু, গিয়ে জুব্বা পরি। পাঞ্জাবি সবগুলো পরা হয়নি।
দ্বিতীয়বার ভেবেছিলাম পাঞ্জাবি কম নেবো। মাত্র ৩ টা নিয়ে যাই৷ গিয়ে একদিন শুধু একটা পরি।
আমি জুব্বাতে খুবই আনকমফর্টেবল ফিল করতাম। সেই আমি ঐখানে গিয়ে জুব্বা পছন্দ করলাম।
সো, আমার সাজেশন— পাঞ্জাবি একটা নিতে পারেন। ঐখানে গিয়ে জুব্বা পরবেন এই চিন্তা করা যায়।
জুব্বা সস্তাই বলা যায়। ৪০-৭০ রিয়ালে ভালো জুব্বা পাবেন।
৫-১০ রিয়ালে মক্কার রাস্তায় যেগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো না কেনাই ভালো।
✅ ৩. সাবান, শেম্পু, ব্রাশ, টুথপেস্ট, তেল, নেইলকাটার এরকম প্রয়োজনীয় জিনিস যা আপনার প্রতিদিনের প্রয়োজন, সেগুলো দেশ থেকেই নিয়ে যান৷ হোটেলে পাবেন, কিন্তু হোটেলে পর্যাপ্ত থাকবে কি-না, পছন্দ হবে কি-না এই ঝামেলায় যাবার দরকার নেই।
✅ ৪. প্রয়োজনীয় ওষুধ দেশ থেকেই নিয়ে যান। পাশাপাশি যেসব ওষুধ লাগতে পারে, সেগুলোও নিতে পারেন। যেমন: জ্বর, শর্দি, মাথাব্যাথা, গ্যাস্ট্রিক, বমি, ফুড পয়জনিং এগুলোও সাথে রাখতে পারেন। তাছাড়া স্যালাইন, গ্লুকোজও নিতে পারেন। অনেক হাঁটতে হবে। নিয়মিত স্যালাইন, গ্লুকোজ খাওয়া যায়।
✅ ৫. লাগেজ যদি একাধিক নেন, তাহলে প্রত্যেক লাগেজেই জামাকাপড় রাখতে পারেন। এমনকি হ্যান্ড লাগেজেও অন্তত একসেট জামাকাপড় রাখা যায়।
আল্লাহ না করুক, যদি আপনার কোনো লাগেজ হারিয়ে যায়, তখন কী করবেন?
দেখা যাবে পরার কাপড় যা ছিলো, সবই ঐ এক লাগেজেই ছিলো। এজন্য লাগেজে কাপড় রাখার পাশাপাশি হ্যান্ড লাগেজেও কাপড় রাখতে পারেন।
✅ ৬. খাবার প্লেট নিয়ে যেতে পারেন। রুমে পারসেল দেয়৷ ঐটাতেও খাওয়া যায়। তবে, প্লেটে খেয়ে অভ্যস্ত আমরা, প্লেট হলে ভালোভাবে খাওয়া যায়। হোটেলে অনেকসময় চাইলে প্লেট পাওয়া যায়। কিন্তু, যদি না পান? এই বিড়ম্বনা এড়াতে যাবার সময় ম্যালামাইনের একটা প্লেট নিয়ে যেতে পারেন।
✅ ৭. পরিচিত কেউ যাবার সময় বা আসার সময় সাথে কিছু দিতে চাইলে তার উপস্থিতিতে চেক করে নেয়া ভালো। যদিও 'কী মনে করবে' এটা একটা ইস্যু। কিন্তু, আপনার লাইফ, সিকিউরিটির প্রশ্ন এটা।
✅ ৮. লাগেজের সাথে পাসপোর্টের ফটোকপি, ভিসার কপি এগুলো রাখতে পারেন। আর মূল পাসপোর্ট ছোট্ট পাসপোর্ট আর ভিসা ব্যাগে সাথে রাখেন, যাতে সহজেই বের করতে পারেন।
✅ ৯. কমন ওয়াশরুম ব্যবহার করতে অনেকের সমস্যা হয়। এজন্য চাইলে অডোনিল, একটা এয়ারফ্রেশনার নিতে পারেন।
✅ ১০. হ্যান্ড লাগেজে একটা হাফ লিটার পানি নিতে পারেন। এয়ারপোর্টে প্রয়োজন হতে পারে। হাফ লিটার হ্যান্ড ব্যাগে থাকলে প্লেনে নিতে দেয়।
✅ ১১. নাস্তার আইটেম কিছু নিতে পারেন। যেমন: দেশে ১০ টাকা থেকে ৩০-৪০ টাকার কিছু বিস্কিট পাওয়া যায়, চানাচুর, চিড়াভাজা পাওয়া যায়। এগুলো লাগেজে নিলে রাতে ক্ষুধা লাগলে বা খাবার পছন্দ না হলে খেতে পারবেন।
ঐখানে কিনে খাওয়া যায়। কিন্তু, সাধারণত এইসব আইটেমের দাম শুনলে অনেকসময় কম্পেয়ার করবেন, কিনতে মন চাইবে না!
✅ ১২. যাদের চা খাওয়ার অভ্যাস আছে, ঐখানে গিয়ে দাম শুনে চা খাইতে আর ইচ্ছে করবে না! রঙ চা ২ রিয়াল, দুধ চা ৩ রিয়াল।
দেশে ১০ টাকায় দুধ চা পাওয়া যায়, ঐখানে গিয়ে ১০০ টাকায় দুধ চা খাবো? এই কম্পারিজনে আর চা খাওয়া হবে না।
চাইলে টি-ব্যাগ এবং রেডিমেইড চা-প্যাক নিতে পারেন। রেস্টুরেন্টে গরম পানি চাইলে সেটা দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারবেন।
আর সবচেয়ে ভালো হয় সাথে একটা ওয়াটার হিটার নিয়ে গেলে। এতে কারো কাছে আর গরম পানি চাওয়া লাগবে না।
এক্ষেত্রে সবসময় চেষ্টা করুন, অন্তত মক্কা-মদীনায় কারো কাছে যেন কোনো কিছু চাইতে না হয়; আল্লাহ ছাড়া।
একটু টাকা খরচ করে দেশ থেকে সবকিছু নিয়ে গেলে, ঐখানে গিয়ে টাকা খরচ করলে অনেককিছুই পাবেন।
✅ ১৩. আমাদের চার্জার থাকে টু-পিন। কিন্তু, মক্কা মদীনায় সবকিছুই থ্রি-পিন। এজন্য ছোট্ট একটা থ্রি-পিনের এডাপ্টার নিতে পারেন। দেশে এটা ৩০-৪০ টাকা লাগবে, মক্কা-মদীনায় ৫ রিয়াল।
✅ ১৪. ডিসেম্বর-জানুয়ারি ছাড়া অন্য যেকোনো সময়ে গেলে অবশ্যই ছাতা এবং সানগ্লাস নিয়ে যাবেন।
✅ ১৫. রিয়াল দেশ থেকে এক্সচেঞ্জ করে নিলে সেটা এক জায়গায় না রেখে ২-৩ জায়গায় রাখুন। লাগেজের ভেতর যদি তালা দেন, তাহলে সামান্য সেখানেও রাখতে পারেন।
বাই এনি চান্স, হারিয়ে গেলে যেন সব একসাথে না হারায়।
১৫. কাপড় শুকানোর জন্য রশি দেশ থেকেই কিনে নিয়ে যান। ছাদে শুকানোর সুযোগ পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে বাতাসে যেন উড়ে না যায়, ক্লিপ নিতে পারেন। ২/১ টা হ্যাঙ্গার নিতে পারেন। অনেকসময় ওয়াশরুমে শুকাতে হয়, জুব্বা হ্যাঙ্গারে রাখলে ভাঁজ হয় না।
এগুলো আপাতত মনে পড়ছে। পরবর্তীতে আর মনে পড়লে এই পোস্টে edit করে যুক্ত করে দেবো।
📌 উমরাহর জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে পোস্টটি share করতে পারেন, এতে আপনার পরিচিত যারা প্রস্তুতি নিচ্ছে, তারাও উপকৃত হবে।