01/01/2020
ব্রুনাই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র।
দেশের সম্পূর্ণ নাম হল “Negara Brunei Darussalam”
এ নামের অর্থ হল সতর্ক এবং শান্তি। এটি একটি রাজতান্ত্রিক ইসলামী দেশ।
ব্রুনাই এর শহরগুলো দেখতে ডিজনি কার্টুনের শহরগুলোর মত, ঠিক যেন রূপকথার দেশ ব্রুনাই । ছোট একটি দেশ হলেও প্রচুর ঐতিহাসিক নিদর্শন এখানে আছে । কারুকার্যময় ও দৃষ্টিনন্দন সব দালান আছে, যা অন্য দেশে খুব কম দেখতে পাওয়া যায়।
উত্তরে দক্ষিণ চীন সাগর এবং বাঁকী সব দিকে মালয়েশিয়া । ব্রুনাই তেল সম্পদে সমৃদ্ধ একটি ধনী রাষ্ট্র । ব্রিটেন থেকে ১৯৮৪ সালে দেশটি স্বাধীন হয় । বন্দর সেরি বেগাওয়ান ব্রুনাইয়ের রাজধানী। দেশটির আয়তন মাত্র ৫,৭৬৫ বর্গকিলোমিটার । শুধুমাত্র চীনের শাংহাই শহরের সমান । ব্রুনাইয়ের সুলতান হলেন একাধারে রাষ্ট্র ও সরকারের প্রধান। মালয় ভাষা ও ইংরেজি ভাষা ব্রুনাইয়ের সরকারি ভাষা। ইসলাম ব্রুনাইয়ের সরকারী ধর্ম । জনসংখ্যা মাত্র ০৫ লাখের কিছু বেশী।
রাজপ্রাসাদ এবং প্রতিটি মসজিদ এর অপরূপ সৌন্দর্য্য আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দিবে । এছাড়া ব্রুনাই এর রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ানে বিশ্বের বৃহত্তম ঐতিহ্যবাহী নদীগ্রাম দেখতে পাবেন । এই নদীগ্রাম খুব সুন্দর করে সাজানো গোছানো । এই নদীর উপরেই স্কুল, ক্লিনিক, দমকল বিভাগ, মসজিদ ও সব ধরনের দোকান আছে । এই গ্রামের বাড়ি-ঘর, বাজার সব কিছু নদীর উপরে কাঠ দিয়ে তৈরি করা । নদীগ্রামে প্রায় ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন এবং তাদের বাড়িগুলো বিভিন্ন রঙ এবং নকশা করে সাজানো, যা আপনাকে খুব সহজেই আকৃষ্ট করবে ।
ব্রুনাই-এ আপনি পাহাড়ি আমাজের খাবার খুব সহজেই পাবেন । যারা দেশে পাহাড়ি অঞ্চলের খাবার খেয়েছেন তারা ব্রুনাই-এ ব্যাম্বো চিকেনের স্বাদ নিতেই পারেন । তাছাড়া ব্রুনাইয়ে খাবারের সমস্যা নেই বললেই চলে । হালাল খাবার নেই বলে অনেক দেশেই যারা ঘুরতে যেতে ভয় পান তাদের জন্য ব্রুনাই নিরাপদ দেশ বলে বিবেচিত হবে খুব সহজে । এছাড়া নাছি লেমাক নামে একটি খাবার পাবেন যা আমাদের বাঙ্গালীদের মত ভাত, মাছ, সবজি বাদাম এবং শুটকি দেওয়া হয় । তাছাড়া আপনি মালয়েশিয়ান ফ্লেভার পাবেন খাবারে, যেহেতু তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মালয়েশিয়ান ।
আধুনিক এবং ব্যয়বহুল শপিং মল আছে, যার নাম ইয়াইয়াসান।
ব্রুনাইয়ে আপনি জঙ্গল ভ্রমণ করতে পারবেন, যারা অ্যাডভেঞ্জার প্রিয় তাদের জন্য ব্রুনাই এনে দিতে পারে সুবর্ণ সুযোগ । টেম্বুরাং ন্যাশনাল পার্ক যা সম্পূর্ণ জঙ্গলে ভ্রমণের অনুভূতি দেয়। রেইনফরেস্ট-এ নৌ-ভ্রমণ প্রকৃতির সাথে কিছু সময় কাটানো । এছাড়া আপনি সমুদ্রের আমেজ নিতে পারবেন মুরা বীচে । আরও আছে ব্রুনাই এর সবচেয়ে বৃহত্তম লেক তেসেক মেরিম্বুন, লুগান লালাক যেখানে আপনি সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন এবং সবচেয়ে আকর্ষনীয় যে ট্যুরিজম প্লেস তা হল সুলতানের প্রাসাদ এবং ব্রুনাই-এর সকল মসজিদ ।
ধনী-গরীব, উচু-নিচু এই সব বিভেদ বিভাজনকে সাথে নিয়েই ব্রুনাই তার নামের মতই সত্যিই একটি শান্ত আর শান্তিপ্রিয় দেশ।
যারাই ব্রুনাই ভ্রমণ করবে তারাই দেশটির নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হবে। ব্রুনাই হচ্ছে একমাত্র এশিয়ান দেশ যার নাগরিকরা ভিসা ছাড়া চীন, রাশিয়া, সেনজেন এলাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারে।
ব্রুনাইয়ের মানুষের মন-মেজাজ সহজ-সরল।ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও খুব বেশি ডাঁটবাট বা হামবড়া ভাব তাদের নেই। পুরো দেশই সবুজে ঢাকা এবং বন-বনানীতে আচ্ছাদিত । দেশের জনগণের তুলনায় সম্পদের পরিমাণ খুব বেশি । আর এ একই কারণে সমস্যা ও জটিলতাও খুব কম।
ব্রুনাইয়ে ৩৫ ধরনের ব্যতিক্রমী প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে, যা এখানে ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না ।
ঢাকা বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনে ৬ নম্বর রোডে ব্রুনাই দারুস সালাম হাই কমিশন এর অবস্থান । ব্রুনাই জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ এবং আসিয়ানের সদস্য।
১৯৫৯ সালের সংবিধান অনুযায়ী পাদুকা সেরি বাগিন্দা সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়াহ মুইদ্দিন ওয়াদ্দাউল্লাহ হলেন দেশের প্রধান।
১৯৬০-এর দশকে একটি বিপ্লবের পর থেকে ব্রুনাইয়ে মার্শাল ল' জারি হয়ে আছে। ব্রুনাইয়ের মুদ্রার নাম ব্রুনাই ডলার । মাথাপিছু আয় প্রায় ৫০,৪৪০.০৩ মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশের প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষ ব্রুনাই থাকে । তারা সেখানে নানান পেশায় নিয়োজিত থেকে সুনামের সহিত বসবাসরত।
ভ্রমণপ্রিয় যারা অনেকদিন ধরে ভাবছেন ব্রুনাই দেশ ঘুরে আসবেন তারা আর দেরি না করে ব্রুনাই ঘুরে আসুন এবং নিজেদের ভ্রমণের ঝুলির ওজন বাড়িয়ে নিন।
ব্রুনাই-এ পর্যটনের উদ্দেশ্যে ভিসার জন্য আপনার কি কি কাগজপত্র লাগবে এবং কিভাবে ভিসার আবেদন করবেন তা সঠিক ভাবে জানার জন্য কমেন্ট করতে পারেন আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো ।