30/09/2024
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের একটি অন্যতম বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্প, যা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি সংযোগ তৈরি করেছে। পদ্মা সেতুর মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩০,১৯৩ কোটি টাকা (প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এই প্রকল্পের অর্থায়ন এবং বিনিয়োগ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে:
বিনিয়োগ ও অর্থায়নের উৎস:
1. বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন:
o প্রাথমিকভাবে বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতারা এই প্রকল্পে অর্থায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিলেও দুর্নীতি নিয়ে উদ্বেগের কারণে তারা অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায়। এরপর, বাংলাদেশ সরকার সম্পূর্ণরূপে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।
o পদ্মা সেতু পুরোপুরি বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয়, যা দেশের জন্য একটি গর্বের বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) বা বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা ছাড়াই তৈরি হয়েছে।
2. বাজেট:
o প্রকল্পটির শুরুতে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১০,১৬১ কোটি টাকা, তবে পরবর্তীতে প্রকল্পটির জটিলতা এবং সময়সীমা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এর মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৩০,১৯৩ কোটি টাকায়।
o প্রকল্পের বেশিরভাগ ব্যয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন এবং নির্মাণ কাজে ব্যয় করা হয়।
3. বৈশ্বিক প্রভাব ও দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা:
o পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের জিডিপি (GDP) বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হবে, যা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বেগবান করবে।
o এই সেতু দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার জন্য সরাসরি সড়কপথে ঢাকায় পৌঁছানো সহজ করবে, যা পরিবহন খরচ এবং সময় সাশ্রয় করবে।
প্রভাব ও লাভজনকতা:
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার সংযোগ দৃঢ় হওয়ায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন এবং শিল্পখাতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে প্রাপ্ত আয়ের একটি বড় অংশ আসে টোল আদায়ের মাধ্যমে, যা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল থেকে সংগৃহীত হয়। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে প্রতিদিনের আয় পরিবর্তিত হলেও প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সেতুটি প্রতিদিন ৩ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকে।
আয়ের উৎস:
1. টোল আদায়: সেতু দিয়ে যাতায়াতকারী বিভিন্ন ধরনের যানবাহন থেকে টোল সংগ্রহ করা হয়। যাত্রীবাহী গাড়ি, বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক যানবাহনের জন্য নির্দিষ্ট টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
2. বাণিজ্যিক কার্যক্রম বৃদ্ধি: পদ্মা সেতু চালুর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে, যা ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক। ফলে পরিবহন খাত থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আয় আসছে।
দৈনিক আয়ের আনুমানিক পরিমাণ:
• প্রথম দিন (২০২২ সালের জুন): পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর প্রথম দিনেই ২.০৯ কোটি টাকা টোল আদায় হয়েছিল।
• মোট আয়: পরবর্তী সময়গুলোতে গড়ে প্রতিদিন ৩-৫ কোটি টাকার মতো টোল আদায় হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
এতে বোঝা যায়, পদ্মা সেতু চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি বড় অবদান রাখছে এবং এটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বেগবান করতে সহায়ক হবে