14/05/2024
বিশ্বজুড়ে এমন কিছু প্রকৃতির নিদর্শন রয়েছে যা আজও মানুষকে ভাবিয়ে তোলে। প্রকৃতির এই নিজস্বতা অবাক করে তোলে মানুষকে। এরকমই কিছু প্রাকৃতিক নিদর্শন আজ তুলে ধরবো আপনাদের সামনে।আজ আমাদের পর্বের প্রথমেই রয়েছে
আর্জেন্টিনার রহস্যময় ঘূর্ণায়মান দ্বীপ ::--
দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী পারানা বয়ে বলেছে ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে ও আর্জেন্টিনা এই তিনটি দেশের ওপর দিয়ে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪ হাজার ৮৮০ কিলোমিটার। আর এত বড়, এতটা দীর্ঘ নদীর ভেতর লুকিয়ে থাকা অজানা অনেক কিছুই আছে, যা হয়তো রয়ে গেছে আমাদের দৃষ্টিসীমার আড়ালে। এমন কিছু রহস্য সেখানে লুকিয়ে রয়েছে যা আজও মানুষের নাগালের বাইরে
এমনই চমকপ্রদ একটি বিষয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে দক্ষিণ আমেরিকার এই পারানা নদীর মোহনায়। আর সেটি হলো ১২০ মিটার ব্যাসের একটি দ্বীপ। দ্বীপটিকে দেখতে সম্পূর্ণ গোল এবং সব থেকে যেটা আশ্চর্যের বিষয় সেটি এই দ্বীপ ঘুরতে সক্ষম।
এমন ভাসমান দ্বীপ অবশ্য পৃথিবীর আরও অনেক জায়গায় আছে। ফিনল্যান্ড, তুরস্ক, ইতালি, সার্বিয়ায় কিংবা রোমানিয়া ও ইউক্রেনজুড়ে থাকা দানিয়ুব নদীর মোহনায় এমন ধরনের বিশেষ দ্বীপের সন্ধান পাওয়া যায়।
পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এধরনের দ্বীপ দেখতে পাওয়া গেলেও আর্জেন্টিনার এই দ্বীপটি কেন রহস্যময় এবং অন্যদের থেকে বিশেষ ভাবে আলাদা আসুন দেখে নেওয়া যাক সেই তথ্য।
বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা হলো এই দ্বীপটির নিজ অক্ষকে কেন্দ্র করে তীর্যক ঘূর্ণির পেছনে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হওয়া বৃহদাকৃতির কিছু কূপ। এরা জলের এমন প্রবাহ তৈরি করে যা দ্বীপটিকে আপনা আপনি ঘোরায়। ঘুরতে থাকা দ্বীপটির সঙ্গে আশপাশের মাটির সংঘর্ষ ঘটার ফলে এটি প্রয়োজনীয় শক্তি পায়, যার ফলে কাদামাটির এলাকাগুলো আলাদা হয়ে পড়ে ও ক্রমশ এটি ক্ষয় হতে থাকে।
দ্বীপটি সাধারণভাবে এল ওজো বা দা আই নামে পরিচিত। পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় এরকম দ্বীপ থাকলেও এটি অস্বাভাবিক রকম ভাবে ঘূর্ণনের জন্য এটি অন্যদের থেকে আলাদা।
তবে কেউ কেউ মনে করেন চোখের আকৃতির এই দ্বীপটির সঙ্গে সংযোগ আছে এ জগতের বাইরের অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপার-স্যাপারের। তবে আমাদের আলোচনায় এই ব্যাপারটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয়।
আর্জেন্টিনার বিখ্যাত চিত্রপরিচালক সার্জিও নিউসপিলার অতিপ্রাকৃত বিষয়ের ওপর একটি সিনেমা বানানোর সময় লোকেশন খুঁজতে গিয়ে এই চোখের মতো আকৃতির জায়গাটি সর্বপ্রথম খুঁজে পান। প্রথম দেখায় এটিকে তার কাছে একদম স্থায়ী মনে হয়েছিলো, কিন্তু পরে আবার খতিয়ে দেখতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন দ্বীপটি কিছুটা সরে গেছে। ছোট্ট এই দ্বীপকে নিয়ে নিয়ে তার আগ্রহ জাগে। ব্যাপারটি ভালোভাবে জানার জন্য তিনি আরও গভীরে যান এবং সিনেমাটির থিম পরিবর্তন করে একটি বিজ্ঞানবিষয়ক তথ্যচিত্র বানানোর পরিকল্পনা করেন।
বিভিন্ন সময়ে গৃহীত এর অবস্থানগত ভিন্নতার ছবিগুলো গুগল আর্থ স্যাটেলাইট ফটোগ্রাফেও দেখা যায়। এর অবস্থান নির্ণিত হয় দক্ষিণে ৩৪ ডিগ্রি ১৫ মিনিট ০৭ দশমিক ৮ সেকেন্ড ও পশ্চিমে ৫৮ ডিগ্রি ৪৯ মিনিট ৪৭ দশমিক ৪ সেকেন্ড।
পরবর্তীতে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য থেকে জানা যায় এই দ্বীপটি ২০০৩ সাল থেকে পারানা নদীর মোহনায় একটি অংশ হিসেবে রয়েছে। ২০১৫ সালে নিউসপিলার এই ঘূর্ণায়মান দ্বীপের রহস্য উদঘাটনের জন্য নিউইয়র্কের একজন প্রকৌশলীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে অর্থ উত্তোলন করতে শুরু করেন।
তারা আশা করেছিলেন ৫০ হাজার ডলার উঠে এলেই তারা সম্পূর্ণ রহস্য উদঘাটন করতে পারবেন। তবে তারা তুলতে পেরেছিলেন তাদের মোট কাঙিক্ষত টাকার মাত্র এক পঞ্চমাংশ। তাই গবেষণার মাধ্যমে দ্বীপটিকে ঘিরে প্রচলিত অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলোর নেপথ্য কারণ জানা ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করা তাদের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি।
তাই আর্জেন্টিনার এই ঘূর্ণায়মান দ্বীপটি আজও মানুষের কাছে রহস্য হিসাবে রয়ে গেছে। বহু বিজ্ঞানী এই অজানা দ্বীপটির রহস্য উদঘাটন করার চেষ্টা করছেন। হয়তো আগামী ভবিষ্যতে কোন একদিন অজানা কোনো তথ্য উঠে আসবে আমাদের কাছে।
©জ্ঞান বিজ্ঞান