13/06/2025
সৌদি নিয়োগ পলিসি: আপনি মালিক, দাস হয়ে যাবেন না
সৌদি আরবে ব্যবসা করতে গেলে কিছু নিয়ম মানতেই হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়মটির নাম Saudization Policy, আরবিতে যেটা বলা হয় নিতাকাত। এই নীতির মূল কথা হলো, আপনি যদি সৌদি আরবে ব্যবসা করেন, তবে সে ব্যবসায় সৌদি নাগরিকদের কিছু চাকরি দিতে হবে। সে যাস্ট একজন এমপ্লয়ি।
যদি আপনি প্রপার রিক্রুটমেন্ট প্রসেস মেনে একজন সৌদি এমপ্লয়ি রাখেন, এবং তাকে সত্যিকারের দায়িত্ব দেন, তাহলে সে-ই আপনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা হয়ে উঠতে পারে।
কারণ এই দেশ তার নিজের সন্তানকে ছোট করে না। একজন সৌদি জানে, সে চাইলে মন্ত্রণালয়ে ঢুকতে পারে, জানে কোন কাজ কীভাবে হয়, জানে কোথায় ফোন দিলে কী রেসপন্স মেলে।
প্রফেশনালিজম বজায় প্রপার রিক্রুটমেন্ট প্রসেসে সৌদি নিয়োগ দিন। তাকে দিয়ে কাজ করান। পার্ফরম্যান্স ভালো না হলে ইন্টারন্যাশনাল এক্সিট পলিসি মেনে বাদ দিয়ে দিন। এগুলো খুবই সহজ প্রক্রিয়া।
অনেকেই এই কথাটা ঠিকভাবে বোঝেন না। তারা ভাবে, “এইটা তো শুধু কাগজের নিয়ম। কাগজে একজন সৌদি দেখিয়ে দিলেই হবে।” সেজন্য অনেক বাংলাদেশি ইনভেস্টর নামে মাত্র একজন সৌদি নিয়োগ দেন। প্রতি মাসে ৮০০–১২০০ রিয়াল দেন, কাজের কোনো চাহিদা নেই, অফিসে আসা লাগবে না, শুধু নামটা GOSI-তে থাকলেই হলো।
এই কাজটা যতটা সহজ মনে হয়, বাস্তবে ততটাই ভয়ানক। কারণ এই “নিয়োগ” একসময় উল্টে গিয়ে ইনভেস্টরকেই বিপদে ফেলে দেয়। দেখা যায়, যে সৌদি এমপ্লয়িকে শুধুই কাগজে রাখা হয়েছিল, সে একসময় নিজেকে কোম্পানির আসল মালিক দাবি করে বসে। মন্ত্রণালয়ে গিয়ে অভিযোগ করে, বা কোন সরকারি চিঠিতে দাবি তোলে। আর তখন একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, যিনি কোটি টাকার ইনভেস্টমেন্ট করেছেন, যিনি মালিক তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন একজন কর্মচারীর সামনে মাথা নিচু করে।
এই দুঃখজনক পরিস্থিতির নামই “সৌদি এমপ্লয়ির দাস হয়ে যাওয়া।” এটা শুধু আইনি জটিলতা না, এটা একজন উদ্যোক্তার আত্মসম্মানের প্রশ্ন। আর সবচেয়ে কষ্টের কথা হলো এই পরিণতি প্রায় সব সময়ই এড়ানো যেত, যদি শুরুতে একটু সচেতনতা থাকত।
সৌদি সরকার এমনিতেই বিদেশি ইনভেস্টরদের জন্য অনেক সুযোগ দেয়। কিন্তু তারা চায়, আপনি এই দেশের মানুষের জন্য কিছু করেন। আপনি যদি একজন যোগ্য সৌদি নাগরিককে সত্যিকার অর্থে নিয়োগ দেন চুক্তি করে, দায়িত্ব দিয়ে, নিয়ম মেনে, তবে সেই মানুষটা আপনার ব্যবসার সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে উঠতে পারে। তিনি আপনাকে সরকারি কাজে সহায়তা করবেন, ব্যাংকে রেফারেন্স দেবেন, মিউনিসিপ্যালিটির কাজ সহজ করে দেবেন, এমনকি দরকার হলে আপনার পক্ষে কথা বলবেন।
আর আপনি যেটা পাবেন, তা হলো শান্তি। আপনার ব্যবসার অফিসে কেউ ঢুকলে আপনি ভয় পাবেন না। ইন্সপেকশন আসলে কাগজপত্র দেখাতে পারবেন। নতুন ওয়ার্ক ভিসা আনতে হলে সমস্যা হবে না। আপনার কোম্পানির Nitaqat স্ট্যাটাস উন্নত হবে “Green” বা “Platinum” লেভেলে যাবে। তখন আপনি হবেন সরকারের চোখে একজন সম্মানিত ইনভেস্টর।
এইসব সুফল পেতে হলে শুরুতেই কিছু কাজ ঠিকভাবে করতে হয়। যেমন সঠিকভাবে রিক্রুটমেন্ট করতে হবে, চুক্তিপত্রে সই নিতে হবে, GOSI ও মাদিনার রেকর্ড আপডেট রাখতে হবে, আর অবশ্যই সেই সৌদি কর্মীকে কাজের পরিবেশ দিতে হবে। আপনি যদি এসব করেন, তবে আপনি ব্যবসার মালিক হিসেবে থাকবেন। আপনার পরিচয় হবে একজন বিদেশি, কিন্তু আত্মবিশ্বাসী ইনভেস্টর হিসেবে।
To Express