07/05/2025
ভ'য়ং'কর বাড়বকুণ্ড! ৬ মে ২০২৫, মঙ্গলবার। রাত ১:২০ মিনিটের কথা। তার আগের বিস্তারিত শুনাই, একটা ইভেন্ট শেষে মোটামুটি ৪ দিন আমরা ৪ জন বাড়বকুণ্ড সমুদ্র সৈকতে ক্যাম্পিং এ আছি।
৫ই মে শেষ, ৬ই মে'র ঠিক দেড়টার দিকে যখন আমাদের রান্না প্রায় শেষ, আমরা তখন ফটোশুট করতে থাকি, কারণ পরেরদিন সকলেই বের হয়ে যাবো। রিফাত ভাই ছবি তুলে তরকারি দেখতে গিয়েছে, আমি আর শুভ ভাই তখন একটু দুরে ছবি তোলাতে ব্যস্ত।
হঠাৎ কয়েকটা মানুষ দুর থেকে অন্ধকার থেকে ছুুটে এসেছে। বয়স সর্বোচ্চ তাদের ১৭/১৮। ৪ জন এসেছে তারা। সবার মুখে কাপড় দিয়ে ঢাকা, হাতে ছু'রি,রা'ন্দা, চাইনিজ কু'ড়া'ল। এসেই আমাদের ঘি'রে সবাইকে এক করে ফেললো। কোনো কথা বলার আগেই তারা আমাদের ফোন নিয়ে নিলো। কিছু বলতে নিলেই কো*প দিবে এমন একটা অবস্থা।
ভাবভঙ্গি গু'রু'তর বুঝে আমরা ৪ জনই যা আছে সব দিয়ে দি। এর পর তাঁবু সব আউলায় তন্নতন্ন করে সব খুঁজে। যা ভাল্লাগে তাই নিয়ে নেয়। তারপর মানিব্যাগ থেকে সব টাকা নিয়ে সবার ফোন ফেরত দিয়ে দেয়,শুধু আমার ফোনটা নিয়ে যায়।
ঘড়ির কাঁটায় তখন ১: ৩৪ মতো। জাস্ট ১৪ মিনিটের একটা ভ'য়া'বহ পরিস্থিতিতে আমরা সবাই হতভম্ব। প্রতিটা মানুষ বাকরূদ্ধ। ওরা থ্রে'ড দিয়ে গেলো ভোরের আলোর পরে তোদের যেনো না দেখি। এদিকে আমাদের রাতের রান্না ওরা লা'থি দিয়ে ফেলে দিয়েছে, সারাদিন না খাওয়া আমরা, রাতের না খেয়ে আমরা বসে তখন, ৪টা মানুষ বাকরূদ্ধ হয়ে মাটিতে বসে আছি।
কোনোমতে একটু শুলাম। ঘুম তো আসেনা, মোটামুটি সকাল হতেই চোখে আর ঘুম নেই। সকাল হলো, কারো পকেটে কানা পয়সাও নেই। এলাকার একছেলে যে আমাদের সাথে রাতে ছিলো, ওকে বললাম কিছু খাবার বাকিতে নিয়ে আসো।
সে নিয়ে আসলো। খাবার তো আর গলা দিয়ে নামে না কারো।
বেলা ১১ টা পার হয়েছে। যে ছেলে কয়েকদিন আমাদের কে এই খাবারে, ইত্যাদিতে সাহায্য করছিলো, ও বললো যারা এ কাজ করেছে সবাইকে চিনি। নাম্বারও আছে! ওকে বুঝিয়ে বললাম যে তাদের কল করো, করে বলো ফোনটা দিয়ে দিতে, টাকা যা লাগে দিবো। ও চলে গেলো, ঘন্টায় ঘন্টায় ওকে কল দিয়ে আপডেট চাই, ও কেমন কথা ঘুরায়।
দুপুর ৩ টার দিকে, আমরা তখন বাড়বকুণ্ড ইউনি গ্যাসের সামনে দাঁড়ানো, মহিউদ্দিন নামে এক জেলে আছে, যার থেকে আমরা বিগত কয়েকবছর ধরেই মাছ নিয়ে থাকি। তাকে কল দিয়ে সব ঘটনা বললাম। সে আমাদের মেম্বারের বাড়ি নিয়ে গেলো।
সে কি এক অবস্থা ভ'য়ং'কর এক না খাওয়া ২ দিনের পর মেম্বারের দোকানে, বের হলো যে ডা'কা'তি করছে, তাদের একজন মেম্বারের ভাতিজা, একজন ঐ যে ছেলে আমাদের খাবারে সাহায্য করতো 'রাকিব' তার চাচাতো ভাই। আর দুইজন ওদের বন্ধু ইত্যাদি।
মেম্বার এই লোক প্রচন্ড রকম ভালো, মোটামুটি গন্যমান্য সকলকে কল দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করলো, কোনোভাবেই কিচ্ছু হচ্ছে না এদিকে। মোটামুটি মাথা নষ্ট হয়ে আছে আমার। যারা ডা'কা'তি করছে এরা পুরা এলাকার নাম্বার ওয়ান ডা'কা'ত, সবাই বলতেছে শুকরিয়া আদায় করেন যে কাউকে কোনো কো'প দেয়নাই।
মোটামুটি ২ ঘন্টার বিশাল ঝামেলা চলছে৷ ঐ ছেলের বাপ কল দিয়ে বলতেছে, ফোনটা দিয়ে যা! ঐ ছেলে বলে তুই কে? কেনো কল দিছোস? বাসায় আসলে সবার আগে তোকে কো'পা'বো! আল্লাহ'র কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম, এমন ভ'য়ং'কর মানুষদের থেকে আল্লাহ বাঁচায় আনছে, তারপর তারা বললো ফোন দিবে টাকা লাগবে!
এটা নিয়ে আরো একঘন্টা ঝামেলার পর মোটামুটি একসময় ফোনটা হাতে পেলাম। পেয়ে ফোনের আসল যে জিনিস, সেসব আর কিছুই বাকি থাকলো না, তারা ফোন ফ্লাশ দিয়েও দিছিলো। কোনো ডকুমেন্টস থেকে কোনো কিচ্ছু নাই ফোনে। সাথে সিম ২টাও ভে'ঙ্গে ফেলছে।
খোদার শুকরিয়া আদায় করে আমরা ৪ জন অনেক সতর্কে বাড়বকুণ্ড থেকে সীতাকুণ্ড বাজারে এসে মাত্র বসলাম।
ক্ষ'য়ক্ষ'তির হিসাবে, আমার পাওয়ার ব্যান্কটা নিয়ে গেছে, সাথে ক্যাশ একটা ভালো বড় অংক চলে গেছে। আর সবচেয়ে বড় জিনিস, সবাই নিরাপদ ছিলো, কারো উপর কোনো এ'ট্যা'ক হয়নি।
সবশেষ একটা কথা, আজকের এরপর থেকে বাড়বকুণ্ড সমুদ্র সৈকত পরিপূর্ণ ভাবে বয়কট করা হলো, এবং সবাই বয়কট করে ফেলেন। ভুলেও ঐসাইডে আর যেয়েন না। পুরো এলাকার এসব ব'খা'টে পোলাপান গ'রম হয়ে আছে, ওদের এলাকা থেকে ফোন উদ্ধার করে আনা চাট্টিখানি কথা নয়!
কেউ ভুলেও বাড়বকুণ্ড ঘুরতে আর যাবেন, কথার আগে কোপ দিয়ে বসবে। আল্লাহ সকলকে সব স্থানে নিরাপদ রাখুক
নাঈম। ৬ই মে ২০২৫, সীতাকুণ্ড বাজার।
- Ayan Shahriyar Nayeem