06/02/2024
নারিতা-ঢাকা-নারিতা সরাসরি ফ্লাইট জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশী দের অনেক দিনের স্বপ্ন। কারণ দেশে যাওয়া বা আসার সময় থাইল্যান্ড, মালায়েশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর কিংবা চীনে অবশ্যই ট্রানজিট নিতে হতো তখন। এইটা ও প্রব্লেম ছিলো না, যদি ট্রানজিট এর সময় টা যাওয়া এবং আসা দুইটা সেগমেন্টেই যদি সিমীত হতো। দেখা যায় একই এয়ারলাইন্সের যাওয়ার ফ্লাইটে ট্রানজিট টাইম সীমিত হলে আসার সময় অনেক বেশি। আবার বিপরীত টাও হতে পারে। এর উপর যেহেতু অন্য একটা দেশে ট্রানজিট নিয়ে যেতে হবে, সেখানকার এয়ারপোর্টে ল্যান্ডিং চার্জ ও গুনতে হচ্ছে, যদিও আপনি আমি সেটা আলাদা ভাবে দেখছি না, কারণ টিকেটের দামের সাথেই সেটা ইনক্লুডেড। আবার দেখা যায় ধরেন থাই এয়ারওয়েজে যাবেন,কোন কারণে থাইল্যান্ডে কোন উৎসব চলছে, জাপান থেকে ব্যাংকক এর টিকেট এভেইলেবল থাকলে ও ব্যাংকক থেকে ঢাকার টিকেট নাই। এরকম অনেক সমস্যার ই সম্মুখীন হতে হতো।
আমি যখন ৪ বছর আগে প্রথম জাপানে আসি, তখন থেকেই শুনছিলাম যে সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে। কিন্তু বাধ সাধলো করোনা প্যানডেমিক। অবশেষে গত ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর দীর্ঘ ১৭ বছর পর আবারো বলাকার ড্রিমলাইনার ৭৮৭ (গাংচিল) ল্যান্ড করলো নারিতা (তোউকিয়ো) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এই ফ্লাইট টি চালু হওয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য তো বটেই পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালের যাত্রীদের জন্য ও অনেকটা সময় সেইভ হয়। এখন পর্যন্ত টিকেটের দাম খুবই সাশ্রয়ী এবং সার্ভিস খুবই চমৎকার। এখন পর্যন্ত ট্রাভেল করা, থাই এয়ারওয়েজ, ক্যাথে ড্রাগন/প্যাসিফিক, বাটিক (মালিন্দো)এবং বিমানের মধ্যে বিমানের সার্ভিস সবচেয়ে ভালো ছিলো। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত থেকে শুরু করে কেবিন ক্রু দের আন্তরিকতায় জাপানিজ নাগরিকেরা ও মুগ্ধ ছিলো।
যাই হোক, এবার আসি অন্য আরেক টা প্রসঙ্গে, জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা মূলত নারিতা/হানেদা (টোকিও বা তার আশেপাশের এলাকাতে বসবাসরত), কানসাই (ওসাকা বা তার আশেপাশের এলাকাতে বসবাসরত), ফুকুওকা (বা তার আশেপাশের এলাকাতে বসবাসরত) এবং খুব কম সংখ্যক মানুষ সাপ্পোরো (হোক্কাইদোউ বা তার আশেপাশের এলাকাতে বসবাসরত) এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাইট নিতেন। যেহেতু সরাসরি ফ্লাইট শুধু নারিতা থেকে এবং ফ্লাইট টা সকাল ১১ টায়, তাই টোকিও বা তার আশেপাশের এলাকাতে বসবাসরত ছাড়া অন্যদের জন্য এই ফ্লাইট টা ধরা একটু মুশকিলই বলা চলে।
অন্যান্য এলাকার কথা তো বলতে পারবো না, যারা #হিরোশিমা বা আশেপাশে তে থাকেন আপনাদের জন্য চমৎকার একটি মাধ্যম শেয়ার করছি। হিগাসি ফুকুইয়ামা স্টেশন থেকে সন্ধ্যা ৭:১৫ তে "জমজম লাইনার" নামে নাইট বাস ছাড়ে, যা সকাল ৬:৩০ এ টোকিও স্টেশন এর "সাউথ এক্সিট, ইয়ায়েসু টার্মিনাল" এ পৌঁছে। একই জায়গা থেকে ১০ মিনিট পর পর টোকিও স্টেশন-নারিতা এয়ারপোর্ট বাস রয়েছে যার টিকেটমূল্য মাত্র ১৩০০ ইয়েন এবং সময় লাগে মাত্র ৬৫ মিনিট। যদি ৭:০০ টায় ও আপনি বাসে চড়েন, ৮:০৫ এ আপনি নারিতা এয়ারপোর্টে!! এবার আরাম করে হালাল উদোন খেয়ে চেক ইন করে ফ্লাইট ধরতে পারবেন। এভাবে ট্রাভেল প্ল্যান টা সাজালে কয়েকটা সুবিধা,
১/ হিরোশিমা/ফুকুইয়ামা/ওকাইয়ামা থেকে টোকিও এর শিংকান্সেন এর যে ভাড়া তার চেয়ে কম ভাড়ায় একদম এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারছেন।
২/ টোকিও যেয়ে কোথায় থাকবেন, হোটেল বুক করবেন কি, নাকি কোন ছোট ভাই-বড় ভাই কে রিকোয়েস্ট করবেন সেই চিন্তা করা লাগলো না।
৩/ সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠিক টাইমের ট্রেন ধরতে না পারলে ফ্লাইট ও রেখে চলে যেতে পারে (আমার নিজের যেই টেনশন টা বেশি হয়) সেই টেনশন করতে হবে না।
৪/ যারা হিরোশিমা থেকে প্রথমবার টোকিও যান, কোন ট্রেনে উঠতে হবে, কোন লাইনের ইরিগুচি/দেগুচি কই এইটা খুঁজে বের করতে ঘাম ছুটে যায়, উপরের রুট ফলো করলে এই প্যারা খাইতে হবে না।
আচ্ছা শুধু মাত্র একটাই লিমিটেশন আছে এই রুট টা ফলো করার, জমজম লাইনার এর লাগেজ পলিসি তে আপনি ১০ কেজি এর বেশি নিমোতসু ক্যারি করতে পারবেন না। ইভেন এক্সট্রা পেমেন্ট করেও না। এই ক্ষেত্রে আমার মতামত, যেহেতু শিংকান্সেনে না যেয়ে আপনার বেশ কিছু টাকা বেচে গেছে, সেই টাকা দিয়ে নিমোতসু "ইয়ামাতো" দিয়ে নারিতা এয়ারপোর্ট আগেই পাঠিয়ে দেন। আপনি যাবেন যাস্ট হ্যান্ড লাগেজ নিয়ে। ব্যস, হয়ে গেলো হ্যাসেল ফ্রি ট্রাভেল!! আপনার কাজ হলো শুধুমাত্র নারিতা এয়ারপোর্ট পৌঁছে একদিক দিয়ে লাগেজ টা "ইয়ামাতো" থেকে নিয়ে "বিমান" এর চেক ইন কাউন্টারে জমা দেয়া।
অনেক লিখে ফেলেছি। আর না। ট্রাভেল বা #এয়ারটিকেট, #বাসটিকেট লাগলে জানাবেন, অবশ্যই সাহায্য করতে ট্রাই করবো!! আর এই পেজ টা একটু লাইক দিয়ে রাখবেন ভ্রমণ বিষয়ক অন্যান্য তথ্যের জন্য। ধন্যবাদ!
Travelism Bangladesh