14/01/2024
আমার মতে ঘুরতে যাওয়া লাক্সারি না কিছু টা নেসেসারি হাওয়া বদলে যাওয়ার চল বহু পুরনো। কিন্তু বর্তমানে আমরা খুব ব্যস্ত নিজের শরীর তার থেকেও বড় কথা নিজের মনের জন্য আমাদের টাইম খুব কম। যদিও না টাইম হয় তো বাদসাধে পকেট বা ট্রেনের টিকিট। তবে আমার মতে ইচ্ছা শক্তি প্রবল হলে নিজের সুবিধা মত প্ল্যান করা যেতেই পারে ।
আজ আমি আমার এই লেখার মাধ্যমে বোলপুর শান্তিনিকেতনকে আমার মতে যত রকম ভাবে ঘুরে দেখা যেতে পারে তার একটা একটা করে প্ল্যান দেবো।
বেড়াতে গেলে আমরা প্রথমেই খুঁজি মনের মত একটা থাকার জায়গা।
☀️ যারা একটু ভিড় থেকে সরে নিরিবিলি তে থাকতে পছন্দ করি শান্তিনিকেতনে তাদের জন্য আদর্শ জায়গা হবে প্রান্তিক, কোপাই বা শিক্ষা ভবনের কাছে কোনো হোটেল বা homestay ।
☀️ যারা প্রকৃতির কোলে থাকতে পছন্দ করেন কিন্তু দিনের কিছু টা টাইম একটু ভিড়ে কোনো সমস্যা হয়না তাদের জন্য আদর্শ হবে সোনাঝুরি।
☀️ যাদের কাছে ভিড় টা খুব একটা সমস্যার কারণ নয় এবং একটু বাজেট ফ্রেন্ডলী হোটেলে থাকতে চান তারা ২ টাইপের জায়গাতে হোটেল দেখতে পারেন
#১ বাস স্ট্যান্ড বা স্টেশনের কাছে । এখন থাকে শান্তিনিকেতন ১ থাকে ১.৫ কিলোমিটার মত হবে। তুলনা মূলক ভাবে বাস স্ট্যান্ড থেকে শান্তিনিকেতন বেশি কাছে ।
#২ এছাড়া পায়ে হেঁটে মেলার মাঠে বা পাঠভবনা ঘুরে দেখতে চাইলে আপনাকে থাকতে হবে লজ মোর বা ফার্স্ট গেটের কাছে কোনো হোটেলে।
( নামবো কোন স্টেশনে??)
আপনার হোটেল যদি সোনাঝুরি , গোয়ালপাড়া , প্রান্তিক বা শ্যামবাটি বাজারের কাছে হয় তো প্রান্তিক স্টেশন আপনার জন্য শ্রেয়।
তাছাড়া বোলপুর স্টেশনে নামাই ভালো।
#ঘোরা_ঘুরি ( ঘুরবো কেমন করে?)
আমি প্ল্যান টা ৩ রাত ২ দিনের মতন করে বলছি, তবে যদি দিন একটা বাড়ান তো আর কি কি জায়গা দেখতে পারেন সেটা লেখার শেষে বলে দেবো।
আমার মতে শান্তিনিকেতনে কোথায় থাকছেন তার উপর নির্ভর করে অনেক রকম প্ল্যানে ঘুরতে পারেন ।
(যদি সোনাঝুরি/ শ্যামবাটি / গোয়ালপাড়া / প্রান্তিকে থাকেন)
Day 1 : দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে কিছুক্ষন সোনাঝুরি হাটে কাটিয়ে একটা টোটো (হাটের সামনেই পেয়ে যাবেন) ভাড়া করে ঘুরে নিন,
১. প্রকৃতি ভবন (সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা)
২. শিশুতীর্থ স্কুলের পাশে ৩৪ ফুট উঁচু বুদ্ধ মূর্তি। এখানে চা চপের অনকে দোকান আছে চাইলে বিকালের চা টা এখানে খেয়ে যেতে পারেন।
৩. জয় জোহার(সকাল ১০ থেকে বিকাল ৫ টা)
৪. আমারকুটি ( সকাল ১০ থেকে বিকাল ৬ টা)
৫. সুরুল গ্রাম ( ইচ্ছা ও সময় থাকলে)
Day 2:
পুষিয়ে গেলে একই টোটো ওয়ালার সাথে না হলে অন্য যেকোনো টোটো ধরে break fast সেরে প্রথমেই চলে যান গোয়ালপাড়ার কোপাই নদী দেখতে। সেখান থেকে এক এক করে ঘুরেনিন সৃজনী শিল্প গ্রাম,
কলা ভবনের কালো বাড়ি, উত্তরায়ণ(museum), কাঁচ মন্দির, শান্তিনিকেতন বাড়ি, মেলার মাঠ, ফাস্ট গেটের বাজার, ইচ্ছা হলে বাংলা দেশ ভবন , পাঠ ভবন( তবে স্কুল টাইম টা পাঠ-ভবনে ঘোরা যায় না, স্কুল টাইমের পরে আপনাকে আসতে হবে)। চাইলে ঘোরাঘুরি ফাঁকে কোনো একটা টাইম লাঞ্চ টা সেরে নিতে পারেন আর না হয় নিজের হোটেলে ফিরেও লাঞ্চ করতে পারেন। তবে আমার মনে হয় ঘোরাঘুরির মাঝেই কোনো একটা জায়গাতে লাঞ্চ করে নেওয়া ভালো এতে হোটেলে ফেরার তাড়া থাকে না ।
তারপরে বিকালে হোটেলে ফিরে বাকি সময় টা সোনাঝুরি হাটে ঘুরে নিনি, বা আগের দিন যদি কোনো জায়গা সময়ের অভাবে বাদ পরে তো সেটাও ঘুরে নিতে পারেন।
Day 3 : আজ বাড়ি ফেরেন যদি। আপনার ফেরার ট্রেন বেলা ১০ টার পরে হয় তো আজ আর প্রান্তিক থেকে ট্রেন না ধরে চলে আসুন বোলপুর স্টেশন , হাতে কিন্তু এক ঘন্টা মতন সময় নিয়ে আসবেন । ঘুরে নিন বোলপুর স্টেশনের museum টাও সকাল ১০ টা থেকে ১ টা খোলা থাকে , এখানে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিতে ওনার শেষ যাত্রার ট্রেনের কামড়া রাখা আছে । অবশ্য ট্রেন সকালে থাকলে আগের দিনও এই museum দেখে নিতে পারেন।
:
( Plan_1 এ যে থাকার জায়গা গুলো উল্লেখ্য আছে তা বাদে অন্য কোথাও থাকলে)
Day 1 : বোলপুর স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে প্রথমেই চলে যান স্টেশনের সামনের museum দেখতে। সেখান থেকে বেরিয়ে স্টেশনের বাইরে থেকে একটা টোটো ধরে নিয়ে চলে আসুন হোটেল। ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে টোটো করে বা পায়ে হেঁটে প্রথমেই চলে আসুন উত্তরায়ণ ( museum , time - 10:30 - 4:30) তারপরে একে একে ছাতিম তলা, কাঁচ মন্দির, শান্তিনিকেতন বাড়ি ও পাঠ ভাবন চত্বর দেখে চলে আসুন কলা ভবনের কালো বাড়ি দেখতে । সেখান থেকে 1st গেটের বাজার টা সন্ধ্যা বেলাতে একটু ঘুরে নিন , চাইলে রাতের খাবার টাও এখানেই করে নিতে পারেন আপনার পছন্দ মত দোকান থেকে।
Day 2 : সকাল বেলা উঠে হোটেলের বাইরে একটা টোটো দাদার সাথে কথা বলেনিন আর যদি নিজের গাড়ি থেকে তা হলে তো কোনো কথাই নাই তারপরে breakfast সেরে বেরিয়ে পরুন এক এক করে দেখে নিন
১.সৃজনী শিল্প গ্রাম ( 9:30-5)
২. সুরুল গ্রাম
৩. আমারকুটি(১০-৬.০০)
৪. জয় জোহার(১০-৫.০০)
৫. ৩৪ ফুট উঁচু বুদ্ধ
৬. প্রকৃতি ভবন ((৯.০০ - ৫.০০)
৭. সোনাঝুরি হাট ( এই হাট বর্তমানে রোজ বসে তবে শনি, রবি বার বেশি জমজমাট)
৮. কোপাই নদী
Day 3 : সকালবেলা ইচ্ছা হলে মেলার মাঠ , বাংলাদেশ ভবন টা পায়ে হেঁটে ঘুরে নিতে পারেন তারপরে breakfast সেরে এইবার বাড়ি ফেরার পালা।
** এই প্ল্যানে ইচ্ছা হলে একটা ডিয়ার পার্ক আছে শিক্ষা ভবনের পিছন দিকে ওইটাকে ইনক্লুড করতে পারেন তবে দেখার তেমন কিছু নাই তাই আমি ইনক্লুড করিনি।(বর্তমানে এন্ট্রি ফি ১০০ টাকা দুই আড়াই বছর আগেও যেটা ছিল ২০ টাকা🥹)
** এই বার আসি হাতে যদি বেশি দিন সময় নিয়ে আসেন তো আর কি কি দেখতে পারেন ।
১. রায়পুর জমিদার বাড়ি।
২. মির্জাপুর গ্রাম।
৩. ইটন্ডা গ্রাম (সাথে সবুজ বন)
৪. কঙ্কালীতলা
৫.ফুল্লোরা তলা
৬. নানুর চণ্ডী দাসের ভিটে
৭. আমখোয়াই ফসিল পার্ক
৮. গড়জঙ্গল
৯. কালিকাপুর রাজবাড়ী/মৌক্ষীরা গ্রাম
#কিছু_কথা
১. শান্তিনিকেতন ঘুরতে এলে যদি নিজের গাড়িতে আসেন তো সেই ক্ষেত্রে বলে রাখি আপনি এখানে সমস্ত জায়গাতে গাড়ি পার্কিং করার জায়গা পেয়ে যাবেন তো গুজবে কান দেবেন না আর , কারো কথা শুনে হুট করে আপনার গন্তব্যের অনেক আগে গাড়ি পার্ক করার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে এই কথা টা সাধারণ সময়ের জন্য , পৌষমেলা বা বসন্ত উৎসব বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে সময় গাড়ি পার্কিং এর ক্ষেত্রে পুলিশ বা সিভিক পুলিশের কথাই কিন্তু শেষ কথা।(বর্তমান সময়ে প্রচুর টোটোর উপদ্রব বেড়েছে যার ফলে আপনার গাড়ি পার্ক করে টোটো তে ঘোরার জন্য হুজ্জতি করছে সে বিষয়ে সাবধান)
২. যে জায়গাতে আপনি ঘুরতে আসছেন সেই জায়গা টাকে নিজের মনে করুন এবং চেষ্টা করুন যেখানে সেখানে প্লাস্টিক বা আবর্জনা না ফেলার। এটা ভুলে গেলে কখনোই হবে না সব দায়িত্ব কিন্তু অথরিটির না কিছু দায়িত্ব কিন্তু নিজেরও।
ধন্যবাদ।।