02/08/2025
Dream as big as you can dream and anything is possible: Michael Phelps
অবশেষে জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছেন শাহরুখ খান, তাও আবার জওয়ান ছবির জন্য। কেউ হাসছেন, কেউ ট্র্রোল করছেন, কেউ আবার সাবাশ কিং অবশেষে 33 বছর পর সাফল্য বলে পিঠ থুড়ি সোশ্যাল মিডিয়া চাপড়াচ্ছেন। চলতি প্রবাদ বলে, অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়। ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিততে সচিনকে 22 বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে, ফুটবল বিশ্বকাপ জিততে মেসিকে 16 বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। অস্কার জিততে লিওনার্দো ডি কেপ্রিওকে কুড়ি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। নয়তো কবেই উল্ফ অফ ওয়াল স্ট্রিট তাকে অস্কার পাইয়ে দেয়। যারা GOAT তারা হয়তো এভাবেই এচিভ করেন। কারণ তারা জানেন সবুরে মেওয়া ফলে।
আর যিনি স্ট্রাগল করতে জানেন, গড ফাদার ছাড়া বন্দ্রা ব্যান্ড স্টেন্ডে মান্নত খাড়া করতে পারেন তিনিও জানেন সিনেমাটা জওয়ান হলেও জাতীয় পুরস্কার তার কাছে কী। একটা সময় তার পরপর ফ্লপ, যব হ্যারি মেট সেজল ফ্লপ, জিরো ফ্লপ। সেই লাস্ট কবে ডিয়ার জিন্দেগি হিট। রাইজ নাম কা ওয়াস্তে বক্স অফিস কালেকশন। একটা সময় রাজার গদি চ্যালেঞ্জের মুখে। সেই ফাঁকতালে হোশিয়ার বলে ঘোড়া ছুটিয়েছেন হালফিলের ভিকি কৌশল, আয়ুষ্মান খুরানা, রাজকুমার রাওয়েরা।
পরপর ফ্লপ নিয়ে একটা সময়ে অস্তিত্বের সঙ্কটে তিন খান। তাদের হাঁটুর বয়সীদের ঝুলিতে একটার পর একটা হিট। কিন্তু সলমন খান নিজে নায়কের চেয়ে বেশী অন্য নায়ককে থুড়ি নায়িকাকে প্রমোট করতে বেশী উৎসাহী। থাগস অফ হিন্দুস্থানের ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে সাময়িক অন্তরালে ছিলেন আমির। ফিরলেন লাল সিং চাড্ডা নিয়ে কিন্তু অতকিম। হালফিলের সিতারে জামিন পর চলেও চললো না।
কিন্তু বলিউড নামক সাম্রাজ্যের একজন রাজা থুড়ি কিং, তিনি জানেন কীভাবে ফিরে আসতে হয়। কারণ যে রাজা; তার তো বসার ফুরসত নেই। 'ফ্যান' নামক শব্দবন্ধের একটা বিশাল প্রজাদের বাৎসল করার গুরুদায়িত্ব তাঁর কাঁধে ।
ছোটবেলা থেকেই সেই রাজা ছুটছে। কখনও দিল্লির অলি-গলি; কখনো গৌরি খানের পিছনে; কখনও বা গোরেগাঁও ফিল্মসিটির আনাচে-কানাচে। তাঁর পিছনে কোনো সেলিম খান নেই; নাসের খান নেই, আছে শুধু ইচ্ছাশক্তি আর দু'গাল ভরা টোল। অভিনয় সেটাও পারেন বটে। কঙ্গ নার ভাষায় বলিউড যদি একটা সার্কাস হয়, তাহলে সার্কাস ধারাবাহিক থেকে শুরু করে বলিউড নামক সার্কাসের রিং মাস্টার বাপ-মা মরা সেই দিল্লির রাজা শাহরুখ খান।
আর হ্যাঁ আরও একটা জিনিস তাঁর বরাবরই ছিলো, সেটা লেডি লাক। শাহরুখ খান থেকে কিং খান, কিংবা শ্যারণ স্টোনের ক্রাশ বা দুবাই টুরিজমের দূত হওয়ার এই যাত্রাপথে একজন লেডি-ই তাঁর মার্গদর্শক; ওই যে কত মেয়ের সতীন: গৌরি খান।
নেহাৎ পিছনে একটা খান পদবী। তাই তো আজ পাকিস্তানি কাল দেশদ্রোহী; পরশু অহঙ্কারি বলে লোকজন ট্যাগিয়ে দিচ্ছে। আমেরিকাতেও নগ্ন তল্লাশির মুখেও পড়ছেন। তাই তো তাকে গলা চড়িয়ে বলতে হচ্ছে: my name is khan and I m not terrorist. প্রতিবার তাকে প্রমাণ করতে হয়েছে ইয়ে জো দেশ হে মেরা, স্বদেশ হে মেরা।
বারবার নিজেকে প্রুফ করতে গিয়েও তিনি যে রাজা ভুলে জাননি। তিনি জানেন প্রজা বৎসল হতে কী করতে হয়। পিছন থেকে দৌড় শুরু করা ভিকি, আয়ুষ্মান, রাজকুমারদের বলতে হয়। যতই ঘোড়া ছোটাও; আমিই কিং খান আমি ইন্ডাস্ট্রি। সিংহাসন আমার অটুট থাকবে। কারণ আমি পরিবারের মহিলা সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেমন ওয়াংখেড়ের সামনে চেল্লাতে পারি, তেমনি অ্যাসিড আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়ে ক্ষতে মলম লাগাতে পারি। আমি মার্কিন মুলুকে নগ্ন-তল্লাশির শিকার; আমি আবার মাদাম তুসোর মোমের মূর্তি। আমি পারতাম বিতর্কে জড়াতে। মদ খেয়ে গাড়ি চালিয়ে দু'-একটা লোক মারতে বা শুটিংয়ে গিয়ে হরিণ শিকার করতে। বা দু'টো তিনটে বিয়ে করতে।
আমি এসব কিছু করিনি। আমি অবসরে মীর ফাউন্ডেশন তৈরি করেছি। যার কাজ acid survivor-দের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, ওরিয়েন্টেশনের দায়িত্ব নেয়। ঝলসে যাওয়া মুখগুলোতে একটু হাসি ফেরাতে আমার মীর ফাউন্ডেশন। এখানেই শেষ নয় তার কীর্তি। সে এক দিনের কথা। চলছে জলসাতে দীপাবলির পার্টি। বলিউডের হুজ' আর হু'রা ব্যস্ত সেলিব্রেটে। এর মধ্যেই ঘটলো অঘটন। অগ্নিকান্ডের কবলে ঐশ্বর্য রাইয়ের ছায়াসঙ্গী তথা ম্যানেজার অর্চনা সদানন্দ। যিনি এখন প্রাক্তন। এটা কী হলো, ভাবতে-ভাবতে যখন আতঙ্ক গ্রাস করছে জলসাতে; তখনই অর্চনাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন শাহরুখ খান। নিজেরও আঘাত লাগলো, তবে বাঁচলো অর্চনার প্রাণ।
এটা গেলো একটা উদাহরণ। ২০১৮ সালে জিরোর প্রমোশনে। হৈচৈ। ধাক্কাধাক্কিতে প্রায় পদপিষ্টের অবস্থা এক সাংবাদিকের। সে সময় আবার সেই সাহায্যের হাত। যে ভাবে ডিডিএলজি-তে সিমরনকে ট্রেনে তুলতে হাত বাড়িয়ে রেখেছিল রাহুল, সেভাবেই সেই সাংবাদিককে বড় অঘটনের হাত থেকে বাঁচালেন গৌরী-পতী।
এবার আসা যাক বলিউডে। এখন যারা সাইয়ারা দেখে কেঁদে, শুয়ে ভাসাচ্ছেন। তারা ডিডি এলজি বা বীর জারা দেখেন নি। তারা তেরে লিয়ে হাম হে জিয়ে গানটা শোনেনি তাই রোমান্স কিং আদতে কে তারা জানেন না। তবে রাহুলের রোমান্সের বাইরেও তিনি চক দে ইন্ডিয়ার কবির খান, স্বদেশের মোহন আর ডিয়ার জিন্দেগির জাহাঙ্গির স্যার।
অতএব হার্ডকোর কর্মাশিয়ালের বাইরে ওর বাকি ছবিগুলো দেখাই যায়। 'লাভার বয়' ইমেজের বাইরে ওর কোন অস্তিত্ব আছে? যেমনটা আমিরের আছে! দেখলাম আছে।
মোহন সফল, জাহাঙ্গির খান সফল আর কবীর খানও সফল। অতএব প্রায় 30 বছর ও বলিউডের কাজ করছে খানিকটা অভিনয়ের জোরে। অর্থাৎ শাহরুখ খানকে কালটিভেট করা যায়। কালটিভেট করতে গিয়ে দেখলাম--লোকটা ওয়ান ওমেন গাই। সেই ৩০ বছর ধরে একজনকে বিয়ে করে সংসার করছে। যে কিনা তাঁর একদা প্রেমিক। শাহরুখ যখন শাহরুখ নয়, তখন প্রেম করছিল ঠিক আছে।
এবার তুমি যখন শাহরুখ থেকে রাজ হলে, তখন তো প্রেমিকা বদলাও। তোমার সমসাময়িক আমির, সইফ দুটো বিয়ে। অক্ষয়, সলমন অনবরত প্রেমিকা বদল করে চলেছে। আর তুমি কিনা ওয়ান গার্ল ম্যান। একটুও কি ব্যক্তিগত জীবনে বিতর্কে জড়াতে ভালো লাগে না। হিরো সুলভ ইগো নড়ে ওঠে না। দেখলাম না, এত কিছুর পরও শাহরুখ একরোখা, গৌরীতেই বন্দি। তাহলে আর করলেটা কী? অন্তত একটা চিঙ্কারা হরিণ মারো, শুটিং ফ্লোরে গিয়ে প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে সিন ক্রিয়েট করো বা ফুটপাথে মদ খেয়ে গাড়ি তুলে দাও। না সে সবেও নেই। অন্তত অসহিষ্ণুতা নিয়ে মন্তব্য করে বাজার তো গরম করো। না তাতেও স্পিকটি নট।
তাহলে এবার উপায়? কোনও উপায় নেই। কারণ শাহরুখ জানতো খেটে খাওয়া কী! সে জানতো তাঁর পিছনে কোনও জাভেদ আখতার, সেলিম খান, নাসের হুসেন বা হালফিলের করণ জোহরের হাত নেই। তাই যা করতে হবে নিজেকে। তাই বাকি সব করতে গিয়ে যদি ফোকাসটা নষ্ট হয়, তাহলে কিং থেকে শিং হতে বেশী সময় লাগবে না। ফলে সব খান একদিকে, শাহরুখ খান অন্যদিকে। যার কাছে সংসার; স্টেটাস, জগৎ বলতে; গৌরী, আব্রাম, সুহানা, আরিয়ান, বরাবর পর্দার পিছনে থাকা এক দিদি এবং অবশ্যই মান্নত (lands end here)। আর আছে বাবার নামে তৈরি এই সংস্থা মীরা ফাউন্ডেশন। আপাতত অ্যাসিড ভিকটিম নারীদের কাছে যা জন্নত। আর এবার তার দেরাজে জাতীয় পুরস্কার। তার এই সাফল্যকে সেলিব্রেট করুন। আম খান কোন গাছের জেনে কী করবে বলুন।
যেভাবে দোসরা নভেম্বর তাবড় ভারতবাসীর তীর্থস্থান, ব্যান্দ্রা ব্যান্ডস্ট্যান্ড গেলে দেখা যাবে মান্নতকে ঘিরে আট থেকে আশি মানুষের আবেগ। বুড়ি থেকে ছুড়ি সবাই চায় মান্নতের সামনে ছবি তুলতে। অর্থাৎ যেন সকলের মান্নত পূরণ করতেই সমুদ্রপারে খাড়া মান্নত।
বিশ্বব্যাপী প্রায় এক মিলিয়নের বেশি মানুষ তার ফ্যান। সান ফ্রান্সিস্কো থেকে আলস্কা, যেখানে যেখানে জীবের অস্তিত্ব, সেখানে সেখানে শাহরুখ ফ্যানক্লাব। গালে টোল পড়া ছেলেটা, সিমরানের রাজ, বলিউডের বাদশা তিনি। ২ রা নভেম্বর; গুরুকে শুধু একবার চোখের দেখা দেখতে রাত থেকেই ইঁট পেতে অপেক্ষা। আর সেই চিরাচরিত হাত ছড়িয়ে দেওয়া পোজ। যা দেখে হলিউডের শ্যারণ স্টোন বিস্মিত হয়ে বলতেই পারেন: জানাম দেখলো মিট গায়ি দুরিয়া, মে ইহা হু ইহা হু ইহা হু ইহা।।। তাহলে জাতীয় পুরস্কারের কী দোষ বলুন।
শাহরুখ বললেই, একটা ক্রেজ নিয়ে চর্চা। কোনো এক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনীর দিনে শাহরুখ তখনও অনুপস্থিত। যদিও তার আগে কাজল একাধিকবার উপস্থিত সংবাদমাধ্যমকে প্রশ্ন করে ফেলেছেন: u people know, did sharukh come?
প্রতিবারই জবাব এসেছে না। প্রতিবারই মুখ বেজার করেছেন সিমরন। তার কারণ একটাই রাজের চেয়ে অফস্ক্রিন শাহরুখের প্রতি, কাজল বেশি ডিপেনডেন্ট। শাহরুখ আসেনি মানে প্রিয় বন্ধু আসেনি। হ্যাঁ এটাই শাহরুখ খান, যাকে ছাড়া পাবলিক ফোরামে অচল কাজল-জুহি। এই সেই জুহি চাওলা ওরফে কিরররররণ, যে কিনা আরিয়ানের জামিনের জন্য ব্যক্তিগত বন্ডে লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। এই সেই শাহরুখ খান, সব অভিমান ভুলে গলা জড়াজড়ি করে ছবি তোলে সলমন-আমির। যেখানেই বিপদ, অন্তত ওপরের দু'টি উদাহরণ তো তেমনই বলছে যে, সেখানেই আবার 'বিঘ্নহন্তা'র মতো বাজিগর উপস্থিত। করোনায় ধাক্কা বলিউড বিপদে পড়লেও রাখাওয়ালা সেই পাঠান কিংবা জওয়ান।
যাঁকে গলা উঁচিয়ে ওয়াংখেড়ের সামনে ঝগড়া করতে দেখা যায়, যাকে মার্কিন মুলুকে নগ্ন তল্লাশির শিকার হতে হয়, সেই তো শাহরুখ খান। his name is khan but he damn care to boycott gang! বারবার ট্রেন্ডের বাইরে গিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে হেরেছে সে, তারপরই ফিরে এসেছে বাজিগর হয়ে। জিরোর ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে হাজার কোটির ক্লাবে ফিরেছে সে। কারণ ওই যে হার কে জিতনেবালো কো বাজিগর কেহতা হে।
যেভাবে আলেকজেন্ডার পুরুকে রাজত্ব ফিরিয়ে দিয়ে প্রমাণ করেছিল সে প্রকৃত সম্রাট, সে ভাবেই হারতে হারতে জিতে গিয়ে সে প্রমাণ করলেন তিনি বাজিগর। জওয়ানের জন্য হলেও তিনি জাতীয় পুরস্কার দাবিদার। কারন হারকে জিতনে বালো কো বাজিগর থুড়ি national award winner কেহেতা হে।