13/05/2025
আপেল এর মরশুমে, সিমলা-কুলু-মানালি
হিমাচল প্রদেশ এর প্রায় সবটাই দেখার মত সুন্দর ৷ কিন্তু হিমাচলের কথা উঠলেই প্রথম যে রুটটার কথা ছবির মত মনে ভেসে ওঠে সেটা অবশ্যই 'সিমলা-কুলু-মানালী' ৷ সিমলা কুলু মানালীর চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য্য যে কোনো পর্যটকের মনে স্বপ্নের মায়াজাল বুনে দিতে সক্ষম ৷ হিমের আঁচল হিমাচলে প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে স্বর্গসুখে গা এলিয়ে হিমশীতল আবহাওয়ায় রোমাঞ্চিত হয়ে বাবুই পাখির মত বরফের ঘর বানাতে স্বপ্ন বুনতে কার না আসা জাগে ৷ 'স্বপ্নের সফর ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস' ফেসবুক ট্রাভেল গ্রুপের উদ্যোগে আমরা বেড়িয়ে পরছি এই জনপ্রিয় রুটে আমাদের ট্যুর প্ল্যান নিয়ে ৷
যাত্রা শুরু — ১২ ই সেপ্টেম্বর ২০২৫
ঘরে ফেরা — ২১শে সেপ্টেম্বর ২০২৫,
দিন ১ :— ডিনার সেরে রাত্রি ৯:৫৫ মিনিটে হাওড়া থেকে নেতাজী এক্সপ্রেসে আমরা রওনা দেবো ৷ আপনি চাইলে রাত্রি ১১ টায় বর্দ্ধমান বা ১২ টায় দূর্গাপুর অথবা ১২:৩০ মিনিটে আসানসোল থেকেও উঠতে পারেন ৷
দিন ২:— এদিনটা আমাদের কাটবে ট্রেনেই ৷ গয়া মূঘলসরাই এলাহাবাদ দিল্লী হয়ে এগিয়ে চলবো আমরা হিমাচলের পথে ৷
দিন ৩: — ভোর রাতেই আমরা নেমে পড়বো কালকা বা চন্ডিগড় স্টেশনে ৷ ভোরের প্রথম আলোর সাথেই সেখান থেকে আমাদের রিজার্ভ করা গাড়িতে আঁকাবাঁকা পথ ধরে অপরূপ পাহাড়ি সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ৮৬ কিলোমিটার দুরে আমরা পৌছে যাবো একসময়ে ব্রিটিশদের গ্রীষ্মকালীন দেশের রাজধানী, এখনকার হিমাচলপ্রদেশের রাজধানী সিমলায় ৷ কাছাকাছি পৌছে পথের বাঁকে বাঁকে যখন দেখবেন পাহাড়ের পর পাহাড় জুড়ে এতবড় শহর তখন আপনি অবাক হবেনই ৷ আপনি চাইলেই এই পথটা যেতে পারেন বিলাসবহুল ভিষ্টাডম ট্রয়ট্রেন শিবালিক ডিলাক্সে (সেক্ষেত্রে সামান্য কিছু বাড়তি খরচ আপনাকেই দিতে হবে) ৷ ব্রেকফাষ্ট সারতে সারতে রিভলবিং সোফায় বসে ১০৮ টি টানেল পার করে পৌছে যাবেন সিমলা স্টেশনে ৷
এতটা জার্নির পর দুপুরে একটু রেষ্ট নিয়ে চলে যেতে পারেন সিমলা ম্যাল রোডে স্ক্যান্ডাল পয়েন্টে ৷ স্ক্যান্ডাল পয়েন্ট থেকে চারদিকে চলে যাওয়া চাররাস্তার ওপরই আছে দেখার অজস্র জায়গা ৷ বাঁদিকের ওপরের রাস্তা ধরে ১৫০ মিটার এগোলে ঐতিহ্যবাহী রিজ ৷ এই ১৫০ মিটারের মধ্যেই হিমাচল ট্যুরিষ্ট ইনফর্মেশন সেন্টার, ললিত কলা একাডেমি, চার্চ আর আইসকেটিং রিং ৷ রিজে দাড়িয়ে আপনার ঘোড়ায় উঠে বা হিমাচলী পোষাক পড়ে ছবি তুলতে তুলতে মনে হবে কতদিনের পরিচিত, কত চেনা এ জায়গা ৷ আইসকেটিং রিং এর পাশথেকে আপনি চলে যেতে পারেন বিখ্যাত লক্করবাজারে ৷ স্ক্যান্ডাল পয়েন্টের ডানদিকের রাস্তাই শিমলা ম্যাল রোড ৷ শিমলা ম্যালরোড ধরে হাটতে হাটতেই আপনি চলে যেতে পারেন শহরের সবচাইতে বড় স্থানীয় বাজার লোয়ার বাজারে ৷ অথবা সোজা চলে যেতে পারেন সিমলা মিউজিয়াম ৷ স্ক্যান্ডাল পয়েন্ট থেকে রিজের যাওয়ার রাস্তায় অপজিট দিকে এগোলেই আপনি সিমলা ডাকঘরের সামনে থেকে হিমাচল ইউনিভার্সিটির ইভিনিং ক্যাম্পাস, শতাব্দী প্রাচীন গ্রান্ড হোটেলের সামনে থেকে ঐ ২০০ মিটার হেটেই পৌছে যাবেন শিমলা কালীবাড়ি ৷ অথবা ম্যালরোড ধরে পিছনদিকে কিছুটা এগোলেই ইন্ডিয়ান কফি হাউজ ৷ ধীরে সুস্থে সারা বিকাল সন্ধ্যা জুড়ে আপনি দেখে নিতে পারবেন এই শহরটা সেরা জায়গাগুলো ৷
দিন ৪ :— এদিন সকাল সকাল ব্রেকফাষ্ট সেড়ে আমরা বেড়িয়ে পরবো সারাদিনের সাইটসিনে ৷ ফাগু, কুফরির মত বিখ্যাত স্পট গুলোতে আমরা ঘুরে দেখবো ৷ ফেরার পথে ঝাঁকু মন্দির দেখে ম্যাল রোড হয়ে ফিরে আসবো হোটেলে ৷ সন্ধ্যেটা আপনি চাইলে ম্যালেই কাটাতে পারেন ৷
দিন ৫ :— এদিন সকালে আমরা ব্রেকফাষ্ট সেরে রওনা দেবো কুলু হয়ে মানালীর পথে ৷ সিমলা শহর থেকে বেড়িয়ে অপরূপ পাহাড়ি রাস্তায় প্রায় অর্ধেকটা পথ আপনাকে সঙ্গ দেবে শতদ্রু নদী ৷ পাহাড়ি রাস্তায় আপনার সাথে সমান্তরাল ভাবে যদি নদীও চলে তবে সে যাত্রাপথের আনন্দ ভাগ করা যায় না, শুধুই উপভোগ করা যায় ৷ এই অভিজ্ঞতা আরও ভালো হবে বিপাশার সঙ্গে ৷ প্যান্ডো ড্যাম ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হয়ে মান্ডি সুন্দরগড় হয়ে তারপর আমাদের সঙ্গ দেবে বিপাশা নদী ৷ এই পথে আমরা দেখে নেবো মান্ডি গুরুদ্বোয়ারা ( যেখানে রয়েছে গুরু গোবিন্দ সিং এর পালঙ্ক ), হুঙ্গি মাতার মন্দির আর সুন্দরগড় লেক ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ৷ দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে হতে আমরা পৌছে যাবো কুলুতে ৷ কুলুর বিখ্যাত ব্যাট আর শাল কারখানা দেখে আমরা বিপাশা নদীর কোলে কিছুক্ষন জিরিয়ে নেবো ৷ এরপর ফলহীন আপেল গাছ দেখতে দেখতে কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা প্রায় ২৪৫ কিলোমিটার পার করে পৌছে যাবো মানালীতে ৷ সন্ধ্যেবেলায় আপনি চাইলে রেষ্ট নিতে পারেন হোটেলের ঘরে, চাইলে ঘুরে দেখতে পারেন মানালীর ম্যাল ৷
দিন ৬ :— এদিন সকালে ব্রেকফাষ্ট সেরে যদি রাস্তা খোলা থাকে তবে আমরা বেড়িয়ে পরবো রোটাং পাসের উদ্দেশ্যে রোটাং পর্যন্থ যদি নাও যাওয়া যায় তবেও মারি, রাল্হা ফলস, নেহেরু কুন্ড, বিহাসনালা, সোলাং ভ্যালী , শিশু ভ্যালি, হয়ে রোটাং পাসের গোটা পথই আপনাকে মূগ্ধ করবে ৷ অনেক রকম এডভেঞ্চার রাইড ও আপনি করতে পারবেন এই দিন ৷ বিকেলে ফিরে সন্ধ্যাটা আপনার ৷
দিন ৭ :— এদিনে আমরা দেখে নেবো মানালীর লোকাল সাইটসিন ৷ ফরেষ্ট মিউজিয়াম, হিরিম্বা মন্দির, তিব্বতিয়ান মনেষ্ট্রি, ক্লাব হাউজ, উষ্ণপস্রবন, মন্দির, বনবিহার দেখে নেবো আমরা ৷ বিকেলটা সম্পুর্নই ফাঁকা থাকবে কেনাকাটার জন্য ৷
দিন ৮ :— সকালে ব্রেকফাষ্ট সেরে আমরা রওনা দেবো মনিকরনের উদ্দেশ্যে ৷ কুল্লু জেলার ভুন্টুর থেকে আজ আমাদের যাত্রাপথের সাথী হবে পার্বতী নদী ৷ এই নদীর তীরেই কাসোল পার করেই আসবে মনিকরন ৷ এখানে পরপর বেশ কিছু মন্দির, গুরুদ্বোয়ারা, উস্র প্রসবন দেখে রওনা দেবো কালকা/চন্ডিগড়ের পথে ৷ প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পথ ৷ গোটা পথ জুড়েই থাকবে নৈসর্গিক দৃশ্য ৷ রাত্রি ১১:৫৫ মিনিটে আমরা ডিনার সেরে ঘরে ফেরার জন্য উঠে পড়ব আবার নেতাজী এক্সপ্রেসে ৷
দিন ৯ :— এদিনটা কাটবে ট্রেনেই ৷
দিন ১০ :— সকাল ৮ টায় আমরা হাওড়া স্টেশনে পৌছে ফিরে যাবো ঘরে ৷
খরচ কত ??
ডলব শেয়ারিং এ জনপ্রতি — ১৪,০০০/-
ট্রিপল শেয়ারিং এ জনপ্রতি — ১৩,৫০০/-
( বুকিং এর জন্য অগ্রিম ৪০০০/- দিতে হবে ৷ অবশিষ্ট টাকা প্রথমদিন শিমলা পৌছে দিতে হবে ৷ আপনি চাইলে এখন থেকেই মাসিক কিস্তিতেও টাকা দিতে পারেন )
কি কি পাবেন না —
১) ট্রেনের খাবার
২) এন্ট্রি ফী
৩)কুলি ও নিজস্ব খরচ
৪) মিনারেল ওয়াটার
৫) চিটিংবাজী
আর, ফোনের ক্যামেরায় তোলা এত ছবি স্টোরের জন্য স্পেস
কি কি পাবেন—
১) স্লিপার ক্লাস ট্রেনের টিকিট ( এসি এর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ডিফারেন্স অফ ফেয়ার লাগবে)
২) ডিলাক্স হোটেল
৩) টেম্পো ট্রাভেলার গাড়ি
৪) তিন বেলা বাঙালি খাবার আর দুবেলা চা, সন্ধ্যার স্নাক্স
৫) অভিজ্ঞ ট্যুর গাইড
৬) ভরসা
আর, চোখের ক্যামেরায় তোলা ছবি মনের স্পেসে স্টোর করার জায়গা
যোগাযোগ :-
সৌভিক পাল - 9830562922
অফিস - দমদম এয়ারপোর্ট এক নম্বর