28/05/2025
২০২৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর, দীর্ঘ ১৭ বছর পর যখন বিমানের সরাসরি ঢাকা-নারিতা ফ্লাইট চালু হলো, তখন শুধু একটা প্লেন আকাশে উড়েনি—উড়েছিল হাজারো প্রবাসীর স্বপ্ন, ভরসা আর গর্ব। বিদেশ বিভুঁইয়ে থেকেও মনে হয়েছিল, "এই তো, আমাদের নিজের দেশ, আমাদের পতাকা, আমাদের ভাষা... সবকিছু চলে এসেছে জাপানের আকাশে।"
প্রথম ফ্লাইটটা যেন ছিল এক বিজয়ের দিন। মায়ের মুখের ভাষায় ‘বিমান বাংলাদেশে আপনাকে স্বাগতম’ শুনে, দেশি খাবারের ঘ্রাণে ভরে উঠা কেবিন, আর কেবিন ক্রুদের আন্তরিক হাসিতে মনে হয়েছিল—এই যাত্রা শুধু যাত্রা নয়, যেন দেশে ফিরে যাওয়ার এক অনুভব। অনেকে বলেছিল, অন্য রুটে গেলে টিকিটের খরচ কম। কিন্তু খরচ বাঁচিয়ে কি মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ মেলে? বিমান মানেই ছিল আমাদের দেশের সুবাস, হৃদয়ের বন্ধন।
বিমানের এই ফ্লাইটটা আমাদের জন্য ছিল অনেকটা পরিবারের একজন সদস্যের মতো। ছুটি কাটাতে যাই হোক, হঠাৎ করেই দেশে ছুটে যেতে হোক কিংবা আত্মীয়-স্বজনের প্রয়োজনে ঝটপট পৌঁছাতে হোক—এই ফ্লাইট আমাদের ভরসা ছিল। বৃদ্ধ বাবা-মা, নতুন মা হতে যাওয়া নারীরা, একা আসা ছাত্ররা বা প্রথমবার জাপানে পা রাখা কর্মীরা—সবাই বিমানের সরাসরি রুটে যেন একটু নিশ্চিন্তে নিঃশ্বাস নিতে পারত। ট্রানজিটের ঝামেলা, ব্যাগ হারানোর ভয়, দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি—সব কিছু থেকে মুক্তি ছিল এই একটাই ফ্লাইটে।
আরেকটু গভীরভাবে ভাবলে বোঝা যায়, বিমান শুধু যাত্রী পরিবহন করে না, এটি আমাদের জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক। কোনো বিদেশি যখন জানতে চায়—বাংলাদেশ থেকে জাপানে সরাসরি ফ্লাইট আছে কিনা, তখন বুক ফুলে বলেছিলাম, “হ্যাঁ, আছে। আমাদের নিজস্ব বিমান যায়, সরাসরি ঢাকা থেকে টোকিও।” এটা কেবল একটা উত্তর নয়, ছিল এক রকম গর্ব, এক টুকরো লাল-সবুজ।
বিমানের এই রুটটা শুধু বাংলাদেশিদের জন্য না, ছিল জাপানে বসবাসরত নেপালি যাত্রীদের জন্যও ভীষণ উপযোগী। অনেক নেপালি বাংলাদেশ হয়ে জাপানে আসতেন, কারণ তারা নিজের দেশ থেকে ঢাকা হয়ে নারিতা পৌঁছাতে পারতেন অপেক্ষাকৃত সহজে। তাছাড়া বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য প্রায় সকল জাপানিজ বিমানকেই বেছে নেন।
আজ সেই রুটটা আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ১লা জুলাই ২০২৫ থেকে আর উঠবে না বিমানের লাল-সবুজ ডানা নারিতার আকাশে। বলা হচ্ছে, হজ ফ্লাইট, বিমান সংকট আর আর্থিক ক্ষতির কারণে এই সিদ্ধান্ত। বিমান কতটা ক্ষতিতে ছিল আমরা জানি না। আমরা শুধু জানি, বিমান না থাকলে আমাদের যাত্রা শুধু দীর্ঘই নয়, কঠিন ও জটিল হয়ে দাঁড়ায়। একা একা ট্রানজিটে বসে থাকা মা, কিংবা অসুস্থ বাবা আর কখনো সরাসরি আমাদের কাছে পৌঁছাতে পারবে না। নতুন যারা আসতে চাইবে, তাদের সাহস হবে কম, ভয়ের হবে বেশি।
আর তাই এই রুটের স্থগিত হওয়া আমাদের কাছে শুধু একটি ফ্লাইট বন্ধ হওয়া নয়, বরং এক ধরনের হারিয়ে যাওয়া। হারিয়ে গেল আমাদের সহজ যাত্রাপথ, আমাদের গর্ব, আমাদের দেশের সঙ্গে এক টুকরো সরাসরি সংযোগ।
এই ফ্লাইটের স্থগিতাদেশ মানে শুধু ট্রানজিটের বাড়তি ঝামেলা নয়, মানে প্রবাস জীবনের একটি আপন অংশকে হারিয়ে ফেলা। আবারও সেই ক্লান্তিকর ট্রানজিট, আবারও বিদেশি কেবিনে চুপচাপ বসে থাকাটা—যেখানে মন খুঁজে ফেরে মায়ের ভাষা, নিজের সংস্কৃতি, আরেকটু বেশি যত্ন।
আমরা যারা প্রবাসে আছি, তারা জানি এই রুটটা আমাদের কতটা প্রয়োজন। এটা শুধু লাভ-ক্ষতির হিসাব দিয়ে বিচার করলে চলে না। এটি আমাদের প্রয়োজন, আমাদের আবেগ, আমাদের দেশের ছোঁয়া।
আমরা চাই, সরকার ও বিমান কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে শুধুমাত্র হিসাবের খাতায় না দেখে প্রবাসীদের বাস্তবতা ও আবেগকে গুরুত্ব দিক। আমরা চাই, আরও পরিকল্পনা, আর একটু প্রচার, আর একটু আন্তরিক প্রচেষ্টা নিয়ে আবার ফিরে আসুক সেই রুট। কারণ আমরা জানি, আমরা একদিন আবার শুনতে চাই—“বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ঢাকা থেকে নারিতার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করছে।”
বাংলাদেশের স্বার্থে নারিতা-ঢাকা রুট চালু রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি নিম্নলিখিত কারণগুলোর আলোকে একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত:
# জাপানি বিনিয়োগের প্রবাহ ত্বরান্বিত করা
জাপান বাংলাদেশের জন্য একটি প্রধান বিনিয়োগ ও উন্নয়ন অংশীদার। টোকিও-ঢাকা সরাসরি ফ্লাইট চালু রাখলে জাপানি ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের জন্য বাংলাদেশে ভ্রমণ ও বিনিয়োগের প্রক্রিয়া সহজ হবে, যা অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) এবং উচ্চপ্রযুক্তি খাতে জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণে এটি সহায়ক হবে।
# জাপানিজ ইনভেস্টরদের সম্মানার্থে
সরাসরি ফ্লাইট চালু রাখা জাপানি অংশীদারদের প্রতি বাংলাদেশের আন্তরিকতা ও গুরুত্ব প্রদর্শনের একটি প্রতীক। এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে এবং ভবিষ্যতে আরও অর্থনৈতিক সহযোগিতার দরজা খুলে দেবে।
# প্রবাসী বাংলাদেশীদের সুবিধা
প্রায় ৪০,০০০ বাংলাদেশী জাপানে কর্মরত ও বসবাস করছেন। নারিতা-ঢাকা রুট তাদের জন্য একটি নিরবচ্ছিন্ন ও সহজ যোগাযোগ মাধ্যম। এটি শুধু তাদের ভ্রমণই সহজ করবে না, বরং রেমিট্যান্স প্রেরণ ও পরিবারের সাথে সম্পর্ক রাখতেও ভূমিকা রাখবে।
# বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সুবিধা
এই রুটটি বাংলাদেশের রপ্তানি (বিশেষ করে গার্মেন্টস ও কৃষিপণ্য) জাপানের বাজারে প্রবেশাধিকার সহজ করবে। পাশাপাশি, কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ও বৃদ্ধি পাবে।
# প্রয়োজনে আর্থিক প্রণোদনা বা পলিসি সাপোর্টও বিবেচনা করা যেতে পারে।
-নারিতা-ঢাকা সংযোগ, বাংলাদেশ-জাপান বন্ধুত্বের নাম!
-বিমানের নারিতা রুট ফেরত চাই। আমরা কেবল যাত্রী নই, আমরা এই আকাশপথের গল্পের অংশ।
-এই রুটটি শুধু একটি বিমানপথ নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও বৈশ্বিক সংযুক্তির একটি সেতু।
______________________________________________
On September 1st, 2023, when Biman Bangladesh Airlines resumed its direct Dhaka–Narita flights after 17 long years, it wasn’t just a plane taking off—it was the flight of our pride, our memories, and our hopes as Bangladeshis living in Japan.
That first flight felt like a celebration. Hearing “Welcome” in Bangla onboard, smelling familiar Bangladeshi food in the cabin, and seeing the warm smiles of our own cabin crew—it all felt like a piece of home had arrived in the skies above Japan.
Yes, some said other airlines were cheaper. But what’s the price of comfort, familiarity, and identity? Biman was never just about money—it was about connection. For us, it was about flying with our own flag, hearing our language, and feeling at home even before landing.
For many, especially the elderly, mothers traveling with children, students arriving in Japan for the first time, or Japanese tourists visiting Bangladesh, this direct flight was a lifeline. No complicated transits, no lost baggage, no long wait times—just a simple, dignified journey between two homelands.
More than just convenience, Biman symbolized our national presence. When someone asked, “Can you fly direct from Bangladesh to Japan?” we proudly answered, “Yes, our own airline flies there.” That answer wasn’t just a fact—it was a moment of pride. A moment when we felt Bangladesh was not just on the map, but in the air.
And now, from July 1st, 2025, that very route will be suspended again. Official reasons include the Hajj season, shortage of aircraft, and financial losses. Reports say Biman lost over Tk 84 crore on the route since relaunching. But to us, that number doesn’t tell the whole story.
Because what we are losing is not just a route—it's a lifeline. A bridge. A flag in the sky. Without Biman, our parents will struggle more to travel. Our first-time visitors will feel lost in transit. Our sense of national pride will feel just a little dimmer.
Biman’s Narita route is not just a business line. It is emotion, it is connection, it is presence. We understand economics matter. But so do people. So do national values. So does dignity.
We urge the government and Biman authorities: please don’t let this route disappear again. Don’t let our connection to home weaken. With better promotion, better planning, and more understanding of what this means to us—this route can still thrive.
One day, we want to hear again:
“Ladies and gentlemen, Biman Bangladesh Airlines is now departing from Dhaka, en route to Narita, Tokyo.”
We are not just passengers—we are part of this journey.
#জাপানে_বাঙালি #বিমান #বিমান_বাংলাদেশ